ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সামিউলের ভ্রাম্যমাণ ঘানিতে খাঁটি সরিষা তেল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৮
সামিউলের ভ্রাম্যমাণ ঘানিতে খাঁটি সরিষা তেল সামিউলের ভ্রাম্যমাণ ঘানি

গাজীপুর: কলুর ঘানিতে চোঁখে মোটা কাপড়ের পর্দা দেয়া গরু ঘুরেই চলে। ঘানি ঘুরে সরিষার দানা ভাঙ্গিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় তেল জমা হয় নির্দিষ্ট পাত্রে। 

এভাবে চোঁখের সামনে তৈরি হয় খাঁটি সরিষার তেল। এর ঝাঁঝালো গন্ধে চোঁখে পানি এসে যায়।

গ্রাম-বাংলার এই ঐতিহ্যের খাঁটি তেল পেতে সবারই আগ্রহ থাকে।  

খাঁটি সরিষা তেলের চাহিদা মেটাতে শিল্পাঞ্চল গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সামিউল ইসলাম যান্ত্রিক ঘানি অর্থাৎ খাঁটি সরিষার ভ্রাম্যমাণ তেলের মিল নিয়ে ঘুরছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। ঘরে  ঘরে খাঁটি সরিষার তেল পৌঁছে দিতে অভিনব উদ্যোগ নিয়ে সামিউল বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। এটি গরু বা ঘোড়াচালিত নয়, ভটভটির ওপর বসানো ডিজেল ইঞ্জিনে শ্যালো মেশিন, যার মাধ্যমেই তেল ভাঙানো হচ্ছে।  

অভিনব এই খাঁটি সরিষা তেলের উদ্যোক্তা হলেন- সামিউল ইসলাম (২৫)। তিনি পাবনার ভাঙ্গুরা থানার সরদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা শামছুল শাহর ছেলে। বর্তমানে তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জরুন এলাকায় হান্নান মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থেকে খাঁটি সরিষা তেলের ব্যবসা করেন।  

ছবি: বাংলানিউজ
সামিউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পারিবারিক ভাবেই তারা সরিষার তেলের ঘানির ব্যবসা করেন। সেই ছোট বেলা থেকেই তিনি দেখে আসছেন তার বাবা ও দাদাসহ অন্যরা অনেক কষ্ট করে ঘানি টানছেন। প্রথমে নিজেরা পরে গরু দিয়ে ঘানি টানতেন।  

এখন অবশ্য সবাই ট্রাকটর মেশিন দিয়ে ঘানি টেনে সরিষার তেল তৈরি করছেন।  

এসএসসি পাশ করার পর আর লেখাপাড় করা হয়নি। তখন ঢাকায় আসেন কাজের খোঁজে। কিন্তু কোনো কাজেই তার ভালো যাচ্ছিলো না। পরে তিনি চিন্তা করেন এখানে মানুষের কাছে খাঁটি সরিষার বিক্রি করলে কেমন হয়? এই ভাবনা থেকেই শহরের মানুষের কাছে খাঁটি তেল পৌঁছে দিচ্ছেন সামিউল। ‍

ঘানি তৈরিতে প্রথমে ৮০ হাজার টাকা দিয়েএকটি ভটভটি কেনেন সামিউল। এরপর সিলার মেশিন ৯০ হাজার, ইঞ্জিন ২০ হাজার, মিস্ত্রি খরচ দিতে হয় আরও ৩০ হাজার। এই মোট ২ লাখ ২০ হাজার টাকা পুজি খাটাতে হয়। এরপর তিনি একজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে তাকে নিয়ে গাজীপুরের বিভিন্ন বাজারে শুরু করেন খাঁটি সরিষা তেলের ব্যবসা। ক্রেতার সামনেই মেশিনে তুলে দিচ্ছেন সরিষার দানা। এরপর মেশিন থেকে বেরিয়ে আসে খাঁটি সরিষার তেল। সেই তেল বোতল বা ড্রামে করে ক্রেতা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। চোঁখের সামনে খাঁটি সরিষার তেল পেয়ে ক্রেতাও খুশি।  

প্রতি কেজি তেলের মূল্য রাখা হচ্ছে ২০০ টাকা। সরিষা ভাঙ্গিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে খৈল। সেই খৈল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা। তিনি গ্রাম থেকে সরিষা কিনে আনেন। প্রতি কেজি সরিষা ৬০ টাকা কেজি।  

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর বাজারে রাস্তার পাশে দেখা পাওয়া যায় সামিউলের খাঁটি সরিষা তেলের মেশিন।  

সামিউল ইসলাম জানান, গাজীপুরের তেল বিক্রির বিষয়টি নির্ভর করে শ্রমিকদের বেতনের ওপর। তার কাছে সব শ্রেণীর ক্রেতারাই আসেন তবে কারখানার শ্রমিকরা বেশি আসেন। তাই মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে ৩’শ থেকে সাড়ে ৩’শ কেজি তেল বিক্রি হয়। আর পরের দুই সপ্তাহ প্রায় ১৫০ কেজি তেল বিক্রি করা সম্ভব হয়। তার খরচ বাদে প্রতিমাসে  ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়।  
প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লিটার তেল বিক্রি হয়। নতুন এই পদ্ধতির কারণে মানুষও খুব আগ্রহ নিয়ে এখান থেকে তেল কেনেন।

খাঁটি সরিষা তেলের ব্যবসায়ী সামিউল ইসলাম জানান, সপ্তাহে ৭ দিনের মধ্যে ৬দিন বিভিন্ন বাজারে তেল বিক্রি করেন। এর মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী জেলখানা রোড এলাকায় প্রতি বুধবার, কাশিমপুর বাজারে সোমবার, সুরাবাড়ি মাদ্রসা মার্কেট বাজারে শুক্রবার, কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজারে প্রতি বৃহস্পতিবার ও আশুলিয়ার বাংলাবাজার এলাকায় প্রতি শনি ও মঙ্গলবার মেশিন নিয়ে ক্রেতাদের সামনে খাঁটি সরিষার তেল বিক্রি করে থাকেন।


বাংলাদেশ সময়: ০৫০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৮

আরএস/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।