ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সংশয়’ কাটাতে ইসিরই ‘সঠিক ভূমিকা’ চায় সুজন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৮
‘সংশয়’ কাটাতে ইসিরই ‘সঠিক ভূমিকা’ চায় সুজন

ঢাকা: দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে চলেছে বিধায় তা ‘সুষ্ঠু’ হবে কি-না, এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হওয়া নিয়ে সংশয়তো আছেই, সবারই সংশয় আছে। তবে আমরা চাই নির্বাচন কমিশন (ইসি) সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেবে। নইলে তরুণ সমাজ গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা হারাবে।’

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য করার আহ্বানে’ সোমবার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সুজন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সংশয়ের কথা বলেন ড. বদিউল। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।


 
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘আমরা সবাই চাই একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। সংশয় যেন অমূলক হয় সেজন্যই আমরা নির্বাচন কমিশনকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান করছি। আশা করবো, নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে, কঠোরভাবে পালন করবে। নির্বাচন কমিশনের হাত অনেক লম্বা। তারা চাইলে আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব। ’
 
একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে প্রায় ১২ হাজারের মতো মনোনয়নপ্রত্যাশী স্ব স্ব দল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এবার যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল বলেন, ‘অবশ্যই। প্রার্থীর সংখ্যা যতো বেশি হবে, ততোই যোগ্য প্রার্থী পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আমরা নিশ্চিত ১২ হাজারের মধ্য থেকে ৩০০ আসনে হাজারখানেক যোগ্য প্রার্থী পাবো। তবে দলগুলোর প্রতি আহ্বান, যারা অবাঞ্ছিত তারা যেন মনোনয়ন না পান। ’

‘এই নির্বাচনটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি বিতর্কিত নির্বাচন হয়, তাহলে তরুণরা আশাহত হতে পারেন, বিপথগামী হতে পারেন এবং গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাহীন হয়ে যেতে পারেন। সেজন্যই এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ’

সুজন সম্পাদক আরও বলেন, ‘অতীতের রেকর্ড দেখলে প্রতীয়মান হবে যে দলীয় সরকারের অধীনে যখনই কোনো নির্বাচন হয়েছে, তাতে ক্ষমতাসীনরাই আবার বিজয়ী হয়েছেন। যেহেতু সংসদ বহাল আছে, তাছাড়া অনেক সংসদ সদস্যই স্থানীয়ভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই তারা যেন ভোটের ফলাফল অযাচিতভাবে প্রভাবিত না করতে পারেন, সেজন্য ইসিকে সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। ’
 
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কিছু নির্বাচনে প্রশাসন তথা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ায় প্রশাসন তথা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়েছে। তাই এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ইসিকে মনে রাখতে হবে, যেহেতু একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সংসদ বহাল রেখেই, এই নির্বাচনে কোনো কোনো প্রার্থী মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের অবস্থান থেকেই ভোট চাইবেন, আবার কেউ ভোট চাইবেন সাধারণ প্রার্থীর অবস্থান থেকে, তাই সতর্ক থাকতে হবে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যরা যেন আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন এবং তাদের পদের প্রভাব ব্যবহার না করতে পারেন। ’

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যমকে পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী বলেন, ‘নির্বাচনী অনিয়ম ও আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়গুলো ফলাও করে প্রকাশ ও প্রচার করুন। অনিয়ম ও আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য প্রার্থী বা অন্য কাউকে সতর্ক করা হলে অথবা জরিমানা বা অন্য কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া হলে তা ফলাও করে প্রকাশ ও প্রচারণা করুন। ’

ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দিলীপ সরকার তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘সৎ যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করুন। অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে অথবা অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, ঋণখেলাপী, বিলখেলাপী, ধর্মব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী, ভূমিদস্যু, কালোটাকার মালিক অর্থাৎ কোনো অসৎ, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট দেবেন না। আর রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া। ’

নির্বাচনে সবার করণীয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাই যেন যার যার করণীয় যথাযথভাবে পালন করে, যেন একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৮
এসএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।