ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতি মাসে ৫০০ নারী-শিশু পাচার হয়ে যায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৮
প্রতি মাসে ৫০০ নারী-শিশু পাচার হয়ে যায় সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রতিনিধিরা। ছবি: শাকিল/বাংলানিউজ

ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে ১০০ শিশু (০-১৮ বছর বয়সী) ও ৪০০ নারী প্রতিবেশী ভারতসহ পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে। গত ১০ বছরে শুধুমাত্র ভারতেই প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি নারী-শিশু পাচার হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই বয়স ১২ থেকে ৩০ এর মধ্যে।

সার্বজনীন শিশু দিবস-২০১৮ উপলক্ষে বুধবার (২১ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে পিসিটিএসসিএন (শিশু পাচার প্রতিরোধে সমাজকে শক্তিশালী ও নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি) এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।  

পিসিটিএসসিএন একটি কনসোর্টিয়াম সংগঠন (বিভিন্ন সংস্থা/সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত)।

যা  ইনসিডিন বাংলাদেশ, কমিউনিটি পার্টিসিপেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, নারী মৈত্রী এবং সোশল অ্যান্ড ইকনোমিক ইনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইইপি) সমন্বয়ে পরিচালিত।

সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের যত শিশু মিসিং বা ট্রাফিকিংয়ের ঘটনা ঘটে তার মাত্র ২৭ শতাংশ দৈনিক পত্রিকায় ও ১২ শতাংশ টিভি নিউজে দেখা যায়। ভারতের কলকাতা, হায়দ্রাবাদ ও মুম্বাইভিত্তিক একটি চক্র দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে একটি শক্তিশালী পাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। যারা নারী-শিশু ও কিডনি পাচারে সক্রিয়।  

মানবপাচারের মাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭৮ জন শিশু পাচার হয়েছে ও উদ্ধার হয়েছে ৬০ জন। আর একই সময়ে ১২৩ জন শিশু পাচার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে আর বর্ডার গার্ড  বাংলাদেশ (বিজিবি)।  

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এসব দেশে প্রায় ১০ লাখ নারী ও শিশু পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।  

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন সংগঠনটির শিশু প্রতিনিধি শারমিন সুলতানা স্বর্ণা ও রোকন। তারা বলেন, নারী ও শিশু পাচারের হুমকির কারণে  অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের সন্তানেরা ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভালো বেতনের কাজ দিয়ে তাদের প্রলোভন দেখিয়ে পরিবারের সম্মতি নেওয়া হয়। পরে বয়স বাড়িয়ে তাদের পাচার করে দেয় এ চক্রের সদস্যরা।  

নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনটির প্রতিনিধি শারমিন সুলতানা স্বর্ণা বলেন, পাচার নিয়ে পৃথিবীতে বিশাল বাণিজ্য রয়েছে। যার মূল উদ্দেশ্য যৌনদাসত্ব, জোরপূর্বক শ্রম, বাধ্যতামূলক শোষণমূলক শ্রম ও অঙ্গ পাচারের মতো কার্যকলাপের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন।  

‘এটি শিশু অধিকারের সর্বোচ্চ লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়। এ কারণে তারা মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, মর্যাদাসহ সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। ’

নারী ও শিশু পাচার রোধে সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশ আকারে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, শিশুর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা নিরসনে সরকারি-বেসরকারি কাজের সমন্বয় ও জোরদার, শিশু অধিকার সনদ ও শিশু আইনের আলোকে শিশুর বিকাশের এবং সুরক্ষার পদক্ষেপ গ্রহণ, শিশুদের বিষয়টি সংযুক্ত করে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২২ বাস্তবায়ন উল্লেখযোগ্য।  

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ইনসিডিন বাংলাদেশের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম খান, এসইইপি-এর সমন্বয়কারী মো. জাহিদ হোসেন, কমিউনিটি পার্টিসিপেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সমন্বয়কারী শরীফুল্লাহ রিয়াজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৮
এমএএম/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।