ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

 ‘চুরি তো করি না, কাম করি খাই’

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮
 ‘চুরি তো করি না, কাম করি খাই’ ভ্যানে করে ধান বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কণিকা রানী। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: ‘নিজের কাম নিজে করতে লজ্জা নাই। মহিলারা উরু জাহাজ চালায়। হামরা ভ্যান চালিয়ে নিজের ক্ষেতের ধান বাড়িত নিয়া যাই। চুরি তো করি না, কাম করি খাই। দুই জনে (স্বামী-স্ত্রী) না খাটলে সংসার চলে না ভাই।’

নারী হয়ে ভ্যানে ধান পরিবহনের ছবি তুলতে গেলে প্রথমে লজ্জা পেলেও পরে বিড়বিড় করে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন কৃষাণী কণিকা রানী। তিনি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাপুকুর ইউনিয়নের তালুক হরিদাস গ্রামের দিনমজুর খগেন্দ্র নাথের স্ত্রী।

কণিকা রানী বাংলানিউজকে বলেন, স্বামী খগেন্দ্র নাথ ও দুই মেয়েকে নিয়ে আমার সংসার। নিজের জমি বলতে ভিটাবাড়ি। স্বামী অন্যের জমিতে কাম করে দৈনিক ৩০০ টাকা আয় করে। তা দিয়ে দুই মেয়ের পড়াশোনা ও সংসার খরচ চালানো যায় না। তাই প্রতি বছর জমি বর্গা নিয়ে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করি। চাষাবাদের কাম আমি নিজেই করি।

বড় মেয়ে হরিপ্রিয়া রানী স্থানীয় হরিদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে মণিকা রানী হরিদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। দুই মেয়েকে শিক্ষিত করে বড় পদে চাকরি পাইয়ে দিতেই এ সংগ্রাম যোগ করেন তিনি।

বাড়িতে নেওয়ার জন্য ভ্যানে ধান সাজাচ্ছেন কণিকা রানী।  ছবি: বাংলানিউজ

কণিকা রানী বলেন, মাঠে কাম করলে কেউ কিছু কই না। তবে ভ্যান গাড়ি টেনে নিতে দেখলে অনেকেই অবাক চোখে দেখে। ভাইরে সংসারে খাবার না থাকলে তো কেউ খাওয়ায় না। তবে কাম করতে লজ্জা কিসের। চুরি তো করি না।

ওই এলাকার স্কুল শিক্ষক রামকৃষ্ণ বাংলানিউজকে জানান, পুরো হরিদাস এলাকার মধ্যে সব থেকে পরিশ্রমী নারী কনিকা রানী। ফসল বোনা থেকে শুরু করে মাঠের যাবতীয় কাজ তিনি করতে পারেন। গ্রামের নারীরা তার অনুকরণ করে কৃষি কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে শুরু করেছে। মাঠে কাজ করলেও মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতিও তিনি খেয়াল রাখেন।

ওই গ্রামের কলেজছাত্র জাহেদ মিয়া বাংলানিউজকে জানান, কণিকা রানী একজন পরিশ্রমী নারী। কখনো অলস সময় পার করেন না। রান্না ঘর থেকে ফসলের মাঠ, সবখানেই কাজ করেন তিনি। এভাবে কৃষি কাজ করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরেয়ে এনেছেন তিনি। প্রতি বছর ফসল বিক্রি করেই বন্ধক নিয়ে ফসলি জমিও কিনেছেন তিনি।

ভ্যানে করে ধান বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কণিকা রানী।  ছবি: বাংলানিউজ

সারপুকুর ইউনিয়নের দায়িত্ব উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পৃথিবীতে কৃষির শুভ সূচনা হয়েছে নারীদের হাত থেকে। এ কথার ভিত্তি বোঝা যায় কনিকা রানীর কৃষি কাজের আগ্রহ দেখে। প্রতিটি ফসল চাষে নিজেই মাঠে নেমে পড়েন তিনি। আলস্য নেই। স্বামীকে অন্যের ক্ষেতে দিন মজুরিতে পাঠিয়ে নিজেই মাঠ থেকে ঘর পর্যন্ত দেখাশোনা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।