ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘পিএইচডি গবেষক এনামুলই ২২ ওয়েবসাইট নকলকারী’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৮
‘পিএইচডি গবেষক এনামুলই ২২ ওয়েবসাইট নকলকারী’ এনামুল হক

ঢাকা: দক্ষিণ কোরিয়ায় পিএইচডি গবেষণারত এনামুল হকই দেশের বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টালসহ ২২টি ওয়েবসাইটের নকলকারী। তাকে আটক করার পর এ দাবি করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-২)।

দু’দিন আগে রাজধানীর আশকোনায় এক বন্ধুর বাসা থেকে বেরিয়ে এনামুল হক নিখোঁজ হয়ে গেছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করার পর শনিবার (২৪ নভেম্বর) তাকে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে আটক করার কথা জানায় র‌্যাব।

র‌্যাব-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী বাংলানিউজকে বলেন, ‘এনামুল কোরিয়ায় বসে দেশের বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টালের ২২টি নকল সাইট পরিচালনা করতেন।

বেশির ভাগ সময় হুবহু কপি করে নিউজ দিলেও মাঝে-মধ্যে নিজের ইচ্ছেমতো সরকারবিরোধী লেখা সেসব সাইটে প্রচার করতেন। ’

সম্প্রতি বিবিসি বাংলাসহ দেশি-বিদেশি মূলধারার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের নামে বানানো ওয়েবসাইট থেকে ভুয়া সংবাদ প্রকাশ হতে থাকে। বিশেষ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন সভা-সমাবেশের বরাত দিয়ে স্পর্শকাতর সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে ওয়েবসাইটে।  

এ বিষয়ে যোগাযোগের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘বিবিসি বাংলাসহ একটি পত্রিকার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তার প্রেক্ষিতে আমরা তদন্তও শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত তদন্ত করে দেখা গেছে যে, ভুয়া ওয়েবসাইটগুলোর ডোমেইন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয়েছে। তবে এগুলোর অ্যাডমিন প্যানেল আমাদের এখান থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। আর খুব সম্ভবত সবগুলো ভুয়া ওয়েবসাইট একই গোষ্ঠীর সদস্যরা পরিচালনা করছেন। আমাদের হাতে কিছু নাম ও নম্বর এসেছে। আশা করছি খুব দ্রুত চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে পারবো। ’

এনামুলের গ্রামের বাড়ি পাবনায়। তার বাবার নাম ফজলুল হক। এক ছেলের বাবা এনামুল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বৃত্তি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার কিওংপুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (কেএনইউ) পিএইচডি করছিলেন।  

পরিবার ও স্বজনরা জানান, গত ২২ অক্টোবর এক মাসের ছুটিতে বাংলাদেশে আসেন এনামুল। গত ২১ নভেম্বর রাত ১টার দিকে তার কোরিয়া যাওয়ার কথা ছিলো। সেদিন সকালে শ্বশুরবাড়ি টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসে আশকোনায় এক বন্ধুর বাসায় ওঠেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বন্ধুর বাসা থেকে বেরিয়ে রিকশায় করে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওয়ানা হন এনামুল। রাত ১১টা পর্যন্ত মোবাইলে বন্ধুদের সঙ্গে তার কথা হয়। কিন্তু ১১টার পরে মোবাইল ফোন বন্ধ পেলে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।  

পরিবারের দাবি, পরদিন ২২ নভেম্বর গভীর রাতে ‘অপহরণকারী’ পরিচয়ে ফোন আসে স্বজনদের কাছে। ২৩ নভেম্বর ভোর ৬টার মধ্যে দেড় লাখ টাকা দাবি করা হয় তাদের কাছে। পরিবার কথিত অপহরণকারীদের দেওয়া নম্বরে এক লাখ টাকা পাঠিয়েও তাকে ফেরত পায়নি। তার আগে পরিবারের পক্ষ থেকে দক্ষিণখান থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়।

এনামুলের পরিবার তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে যা বলেছে সে বিষয়ে র‌্যাব বলছে, তাদের ধারণা এনামুল ইচ্ছাকৃতভাবে অপহরণের নাটক সাজিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর ভিন্নপথে নিয়ে নিজে কোরিয়া চলে যাওয়ার ছক কষেছিল।

এ বিষয়ে মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, এনামুলের পরিবার দাবি করেছিল কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তারা চারটা বিকাশ একাউন্টে এক লাখ টাকা অপহরণকারীদের দিয়েছে, কিন্তু চারটি মোবাইল দিয়ে ৬০ হাজার টাকার বেশি পাঠানো সম্ভব নয়। এনামুলের পরিবারও চেয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মনোযোগ ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে, এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, এনামুল হক ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। তখন তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। এসব নকল সাইট ভিজিট থেকে যে আয় হতো, তার ৭০ শতাংশ ছাত্রশিবিরের তহবিলে জমা হতো।

এ ঘটনায় এনামুলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।

মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা প্রথম আলো, বিবিসি বাংলা, বাংলা ট্রিবিউন থেকে অভিযোগ পাই যে, তাদের ওয়েবসাইটের আদলে নকল সাইট তৈরি করে একটি মহল পাঠকদের বিভ্রান্ত করে ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করছে। এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে গেলে আমরা এনামুলের খোঁজ পাই।

এনামুল কোরিয়ায় বসে ওয়েবসাইটের হোস্টিং ডোমেইন কিনে দেশের বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টালের ২২টি নকল সাইট পরিচালনা করতেন। বেশিরভাগ সময় হুবহু কপি করে নিউজ দিলেও মাঝে-মধ্যে নিজের ইচ্ছেমতো সরকারবিরোধী লেখা সেসব সাইটে প্রচার করতেন। সেসব নিউজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ভুয়া পেজ তৈরি করে প্রচার করতেন তিনি।

এনামুলের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরুর পর আমরা এনামুলের শ্বশুরবাড়ি জামালপুর ও তার গ্রামের বাড়ি পাবনায় যাই, সেখানে খোঁজ নেই, পরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৮/আপডেট: ২২৫৩ ঘণ্টা
পিএম/আরবি/এইচএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।