ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নির্বাচনে দুর্নীতিবাজদের বয়কটের আহ্বান দুদকের

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৮
নির্বাচনে দুর্নীতিবাজদের বয়কটের আহ্বান দুদকের

ঢাকা: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রমাণিত দুর্নীতিবাজদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। একইসঙ্গে নির্বাচনে প্রার্থীদের অপ্রদর্শিত আয় ও কালো টাকা অর্জনের বিরুদ্ধেও কঠোরতা অবলম্বনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

নির্বাচনের রাজনৈতিক ডামাডোলে দুদক চেয়ারম্যানের এ বক্তব্য অনেকের চোখ এড়িয়ে গেলেও আমলে নিয়েছে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলো। প্রার্থী বাছাইয়ে তাই সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন তারা।

গত সপ্তাহের শুরুইতেই অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্মেলন থেকে ফিরে এসে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমি বিশ্বাস করি পরীক্ষিত ও প্রমাণিত দুর্নীতিবাজদের জনগণ ভোট দেবেন না। ’ এ সময় নির্বাচনে দুর্নীতিবাজদের বয়কট করারও আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি একদম পরিষ্কার যে, বিএনপি ও তার নেতা-কর্মীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সরকার যে ছক কষেছিলো, সে মতোই কথা বলছেন দুদক চেয়ারম্যান। তারা মূলত মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আদালতের মাধ্যমে যে রায় দিয়েছে, তাকে সামনে আনতে চাইছে।

তারা বলেন, আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন মামলা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমন কি বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এখন সরকারি দলের ভাষায় কথা বলায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

নিজ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রার্থী যদি হলফনামায় ভুল তথ্য দেন, তবে তাদের মুখোশ উন্মোচন করবে দুদক। নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

একই বিষয়ে গত ২২ নভেম্বর আবার কথা বলেন ইকবাল মামুদ। তিনি বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা কালো টাকা অর্জন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে দুদক।

তিনি বলেন, ব্যক্তির রাজনৈতিক, সামাজিক বা পেশাগত পরিচয় কমিশনের কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়, ব্যক্তি যদি সংবিধান লঙ্ঘন করে কালো টাকা বা অবৈধ সম্পদ অর্জন বা পেশীশক্তি ব্যবহার করে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন তবে তাকে কমিশন আইন আমলে নিয়ে আসবে।

দুদকের একাধিক সূত্র বলছে, কমিশন যে উদ্দেশ্যে গঠন হয়েছিল বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তা হয়তো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সফল হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকতারা দায়িত্ব পালনকালে পেশীশক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে, জনগণ যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধে এগিয়ে আসার কথা ছিল, সেভাবে এগিয়ে আসেনি। তবে বিলম্বে হলেও প্রতিবাদ হয়েছিল। হয়তো এজন্যই দুদক এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি।

তবে এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে বলেন, আত্মসমালোচনা করতে আমি ভয় পাই না। আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম প্রতিটি অনুসন্ধান বা তদন্ত নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করবো। বাস্তবে তা  সম্ভব হয়নি। সে কারণেই জনআস্থার ঘাটতি রয়েছে।

তিনি বলেন, কমিশন পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি সেবা প্রদানের পথকে মসৃণ ও নিষ্কলুষ করার চেষ্টা করছে। কমিশন চায় দুর্নীতি ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করতে।  তাই কমিশন বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর বা সংস্থার দুর্নীতির সম্ভাব্য উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে সুপারিশ  প্রণয়ন করে সরকারের কাছে পাঠাচ্ছে। এগুলো স্বতঃসিদ্ধ কোনো বিষয় নয়। কমিশনের স্বীয় বিবেচনায় এসব সুপারিশ প্রণয়ন করা হচ্ছে।

দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, কমিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে কোনো কালো টাকা বা অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের দেশের জনগণ নির্বাচিত করবে না। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তবে নির্বাচনী ব্যয়ের নামে কালো টাকা ব্যয়ের বিষয়টি দুদক পর্যবেক্ষণ করবে। কমিশন প্রত্যাশা করে নির্বাচনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে সবাই স্বচ্ছতা বজায় রাখবেন এবং নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন কমিশনে ব্যয় বিবরণী জমা দেবেন। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেবেন না, এখানে অবৈধ সম্পদের কোনো বিষয় থাকলে দুদক আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৮
আরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।