ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সহিংসতার শিকার ৯৭ শতাংশ নারী ‘বিচার’ পান না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৮
সহিংসতার শিকার ৯৭ শতাংশ নারী ‘বিচার’ পান না দৃক গ্যালারিতে গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরছেন বক্তারা-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার দুই-তৃতীয়াংশই পারিবারিক। আর সহিংসতার শিকার প্রায় ৯৭ শতাংশ ভুক্তভোগীর অভিযোগ আদালতে শুনানির পর্যায়ে যায় না বা গেলেও বাতিল হয়ে যায়। মাত্র ৩ শতাংশ ভুক্তভোগী নিজেদের পক্ষে বিচার পান।

সোমবার (২৬ নভেম্বর) ঢাকার দৃক গ্যালারিতে ‘বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার উপর দৃষ্টিপাত: প্রবণতা এবং সমাধান’ বিষয়ক একটি গবেষণায় এমন তথ্য তুলে ধরে একশন এইড বাংলাদেশ ও জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম (জেএনএনপিএফ)।  

একশন এইড বাংলাদেশ এবং জেএনএনপিএফ ১৬ দিনব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উদযাপনের প্রেক্ষাপটে ২০টি জেলার ২ হাজার ৮০০টি ঘটনার তথ্য নিয়ে এই গবেষণা করে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন গবেষক আহমেদ ইব্রাহীম।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত মামলাগুলোর প্রতি পাঁচটির মধ্যে চারটি মামলাই আদালতে উত্থাপিত হতে ২ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। তারপর বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। এছাড়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৭৫ শতাংশ প্রতিবেদনই ধর্ষণ সম্পর্কিত। যেখানে প্রতিবেদন বলছে, বেশিরভাগই পারিবারিক সহিংসতার বিষয়। অর্থাৎ, গণমাধ্যম বাড়ির বাইরের সহিংসতা এবং যৌন সহিংসতাকে অধিক হারে তুলে ধরে। এভাবে ‘নারীরা বাড়িতে নিরাপদ’- এই ধারণাকে স্থায়ী করে রাখা হয়েছে। তবে গবেষণা বলছে, নারীরা ঘরেই বেশি অনিরাপদ।

একশন এইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ঘরে-বাইরে সব জায়গায় আমরা নির্যাতন মেনে নিচ্ছি। আবার যেখানে গিয়ে নির্যাতনের সুরাহা বা বিচার পাওয়া উচিৎ তা পাওয়া যাচ্ছে না। যখনই আমরা কোনো না কোনো নির্যাতনকে মেনে নিচ্ছি আমরা সহিংসতাকে সমর্থন করছি। ফলে নারীদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। আমরা মেনে নিচ্ছি যে নারী ও শিশুর উপর নির্যাতন করা যায়। যখনই আমরা সহ্য করছি তখনই আমরা প্রশ্রয় দিচ্ছি। তাই আমাদের সবার নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে।

দৈনিক ইত্তেফাক-এর সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, নারীদের ছোটবেলা থেকেই যেকোন সমস্যা লুকিয়ে রাখার শিক্ষা দেওয়া হয়। যতদিন পর্যন্ত আমাদের বিচার ব্যবস্থা ন্যূনতম পর্যায়ের নিরপেক্ষ না হবে ততদিন এই সমস্যার সমাধান হবে না। নারী-পুরুষ উভয়কেই সচেতন করতে হবে। এখানে গণমাধ্যম প্রচার ও প্রকাশনার মাধ্যমে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

নারীনেত্রী ও নিজেরা করি-এর সমন্বয়ক খুশি কবির বলেন, আমাদের সমাজে মনে করা হয় নির্যাতন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। আবার নির্যাতনের শিকার একজন নারী থানায় গিয়েও অভিযোগ দিয়ে সহযোগিতা পান না, হয়রানি করা হয় তাকে। আইনি জটিলতায় বিচার পেতে অনেক সময় লাগে। একজন নারী বা একটি পরিবারের পক্ষে টাকা খরচ বা সময় দিয়ে পরিশেষে বিচার পাওয়া খুবই কঠিন। সে কারণে অধিকাংশ মামলার বিচার আলোর মুখ দেখে না।

গবেষণায় কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো-নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং ঘরে এর ব্যাপকতাকে নির্মূল করার জন্য আইন করা এবং তার বাস্তবায়ন করা; জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নারীরা যেন ঘরে সংঘটিত সব ধরনের সহিংসতা চিহ্নিত করতে পারে সে বিষয়ে তাদের সচেতনতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করা; নারীরা যাতে সহিংসতার ঘটনার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কিংবা অভিযোগ করতে পারে তার জন্য সব তথ্য দিয়ে সহযোগিতা নিশ্চিত করবে সরকার; নারীরা যাতে সঠিক উপায়ে আইনগত অভিযোগগুলো দাখিল করতে পারে সে বিষয়ে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া এবং গণমাধ্যমের উচিৎ পারিবারিক সহিংসতার বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারে নজর দেওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
জিসিজি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।