ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চার বছরে পদ্মাসেতু, এখনো যত কাজ বাকি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৮
চার বছরে পদ্মাসেতু, এখনো যত কাজ বাকি পদ্মাসেতু

মুন্সিগঞ্জ: ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু হয়েছিল পদ্মাসেতুর। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা আর হচ্ছে না। 

নভেম্বর মাসের শুরুতে মূল সেতুর ৭১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি শেষ এ মাসেই।

সেতুর বাকি কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদারকে ১ বছর সময় দেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে পদ্মাসেতুর প্রকৌশলী সূত্র।  

পদ্মাসেতুর প্রকৌশলী সূত্র থেকে জানা যায়, মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। নদীতে যে ২৬২টি পাইল বসবে তার মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ১৮৬টি পাইল ড্রাইভ। বাকি আছে ৭৬টি পাইল ড্রাইভ। ৬টি পিলারের ওপর স্প্যান বসেছে ৫টি। এখনো ৩৬ পিলারের ওপর ৩৫টি স্প্যান বসানো বাকি। মূল সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ১৩টির কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর ২৯টি পিলার স্প্যান বসানোর উপযোগী করতে কাজ চলছে। মাওয়ায় মোট ১৭টি ট্রাস (স্প্যান) এসেছে যার মধ্যে ৫টি স্থায়ীভাবে ও ১টি অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে।

পদ্মাসেতু (ফাইল ফটো)নদী শাসনের মোট ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মোট ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৩ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে ভায়াডাক্টের ৪১টি পিলারের পিয়ার কলামের মধ্যে ৬টির কাজ শেষ হয়েছে এবং ৩৫টির কাজ চলছে। জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টের ৪৭টি পিলারের পিয়ার কলামের ১৮টি শেষ হয়েছে এবং ২৯টির কাজ চলমান। মূল সেতুর ২ প্রান্তের ২টি ট্রান্সিশন পিয়ারের ৩২টি পিয়ারের সবগুলো পাইল শেষ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের ৩৫৬টি ভায়াডাক্টের সবগুলো পাইল বসানো হয়েছে। নকশা সমাধান হওয়া ৯টি পিলারের কাজ এখনো শুরু হয়নি। পাইল ড্রাইভ সম্পন্ন হওয়া পিলারগুলো হলো-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৯, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৮, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১।  
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বাংলানিউজকে বলেন, সেতুর ১ নম্বর পিলারের ১৬টি পাইল ড্রাইভ সম্পন্ন। রড বাধাইসহ আনুষাঙ্গিক কাজ চলছে। শিগগির পাইল ক্যাপের কাজ শুরু হবে। ৯ নম্বর পিলারের পাইল ড্রাইভ শেষ ও সয়েল রিমুভাল এর কাজ চলছে। ১৫ নম্বর পিলারের সয়েল রিমুভাল এর কাজ শেষ। বর্তমানে সিলিং কংক্রিটিং হচ্ছে। ১৮ নম্বর পিলারের থার্ড লিভ কংক্রিটিং বাকি আছে। ১৯ নম্বর পিলারের সয়েল রিমুভাল এর কাজ চলছে। ২১, ২২, ২৩ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপের কাজ শেষ। স্প্যান বসানোর জন্য উপযোগী সম্পন্ন হওয়া পিলারগুলো হলো- ২, ৩, ৪, ৫, ১৩, ১৪, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ১৬। ২৮-৩২ নম্বর পিলার এলাকায় ড্রেজিং চলছে। শিগগির পাইল ড্রাইভ বাকি থাকা পিলারগুলোতে প্লাটফর্ম বসে কাজ শুরু করবে।  

পদ্মাসেতু (ফাইল ফটো)জানা যায়, নবায়ণের জন্য সংসদীয় কমিটির কাছে ৩ মাস আগে চিঠি পাঠানো হয়। সেখান থেকে ১ বছর সময় বাড়ানো হয়। তবে সিদ্ধান্তটি এখনো পদ্মাসেতু প্রকল্প এলাকায় আসেনি।  

তবে প্রকৌশলীরা বলছেন, ২ বছর সময় ছাড়া সেতুর কাজ সম্পন্ন হবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এখনি ২ বছর সময় দেওয়া হলে কাজ ধীর গতিতে চলবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে ১ বছর সময় দেওয়া হয়েছে। কাজের অগ্রগতি দেখে পরবর্তীতে আরো বাড়তি সময় দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।  

প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, ১ বছরের বেশি সময় ধরে পদ্মাসেতুর ১১টি পিলারের নকশা জটিলতায় ছিল। পিলারগুলোর পাইলিংয়ের ৩৮০ থেকে ৪০০ ফুট গভীরতায় ধরা পড়ে কাদার স্তর। ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ নম্বর পিলারের নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। তবে এখনো নকশা বাকি আছে ৬,৭ নম্বর পিলারের। নকশা সমাধান হওয়া পিলারের ৭টি করে পাইল ড্রাইভ হবে।  

এছাড়া এসব পিলারে স্ক্রিন গ্রাউটিং নামে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে। সম্প্রতি প্রকৌশলীরা স্ক্রিন গ্রাউটিংয়ের কাজের জন্য ১৬টি টেম্প পাইল প্রস্তুত করেছেন। সেতুর ৪১টি স্প্যানে রেলওয়ে স্ল্যাব বসবে ২ হাজার ৯৫৯টি। পরীক্ষামূলকভাবে ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর ৫০টির মতো স্ল্যাব বসেছে। মাওয়া প্রান্তে ৭০০ বেশি এসব স্ল্যাব প্রস্তুত আছে।  

জানা যায়, বিশ্বের খ্যাতনামা প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যের রেন্ডাল লিমিটেড সেতুর ব্যবস্থাপনা পরামর্শকের দায়িত্বে আছে। এর সঙ্গে আছে জাপানের পাডিকো কেইএল ও বাংলাদেশের বিসিএল। পিলারের নকশা সমাধানে এই ৩টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহায়তা করছে ডেনমার্কের পরামর্শক কাউই।  

পদ্মাসেতু (ফাইল ফটো)তবে সেতুর ৭১ শতাংশ কাজের বর্তমান অগ্রগতির সঙ্গে একমত নন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। মূল সেতু নির্মাণের চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। নদীশাসনের চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। জুন পর্যন্ত ২ প্যাকেজের আওতায় ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ৬ হাজার ৯০৭ কোটি ৮১ লাখ ও ৩ হাজার ৪০৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। তবে কয়েক দফা সময় বাড়ার পর পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বর্তমানে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। নকশা বাকি ও সময় বেড়ে যাওয়ায় এই ব্যয় আরো বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

সূত্র জানায়, সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে। আর সেতুটির নকশা প্রণয়ন করা হয় তারও দুই বছর আগে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ৯টি পিলারের নকশা সমাধান হলেও এখনি বাকি ২টি পিলারের। নকশা প্রণয়নের সময়ে প্রতিটি পিলারের গোড়ার মাটি পরীক্ষা করা হয়নি। ৫টির পরপর ১টি করে পিলারের মাটি পরীক্ষা করা হয়, আবার তুলনামূলক কম গভীর মাটি পরীক্ষা করা হয়। ৭০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত মাটি পরীক্ষা করা হয়। ফলে এর নিচে মাটির কি অবস্থা রয়েছে তা জানা যায়নি।  

উল্লেখ্য, সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর ৫টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে ১ কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় ৪ মাস পর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। এর মাত্র দেড় মাস পর ১১ মার্চ শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। এর ২ মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। আর পঞ্চম স্প্যানটি বসে এক মাস ১৬ দিনের মাথায়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, ০১ ডিসেম্বর, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।