ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যেভাবে তারামন বিবিকে খুঁজে বের করেন বিমল কান্তি 

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৮
যেভাবে তারামন বিবিকে খুঁজে বের করেন বিমল কান্তি  মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক তারামন বিবি

ময়মনসিংহ: উপাধিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকায় তার নাম দেখা যায়। সরকারি গেজেটে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানেও তার নাম আছে। কিন্তু তারই কেবল খোঁজ মিলছিলো না। ময়মনসিংহে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ের গবেষক অধ্যাপক বিমল কান্তি দে নেমে পড়লেন সেই উপাধিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে খুঁজে বের করার মিশনে। একান্ত ইচ্ছে-আন্তরিকতা আর পরিশ্রমের পর সেই উপাধিপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক তারামন বিবিকে খুঁজে বের করে ফেলেন বিমল কান্তি।

দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য রণাঙ্গনে পর্যন্ত লড়াই করা সেই বীরকন্যা তারামন বিবি সম্প্রতি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ঠিক ২৩ বছর আগে অকুতোভয় এ নারী মুক্তিযোদ্ধাকে খুঁজে বের করার আদ্যোপান্ত বাংলানিউজের কাছে বললেন ৭৮ বছর বয়সী অধ্যাপক বিমল কান্তি।

অধ্যাপক বিমল বলেন, “১৯৮৭ সালে ময়মনসিংহ জেলার দ্বি-শতবার্ষিকী উৎসবকে ঘিরে ‘ময়মনসিংহের জীবন ও জীবিকা’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। তখন ময়মনসিংহের ডিসি ছিলেন আব্দুল মান্নান। ”

“ওই গ্রন্থে ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহে মুক্তিযুদ্ধ-৭১’ শীর্ষক ১০৮ পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ লিখি। এই প্রবন্ধের শেষে আমি উপাধিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা তুলে ধরি, আর সেটা লোকমুখে শোনা। পরে গেজেট তালাশ করে দেখি সেখানে তারামন বিবি’র নাম রয়েছে। তখন থেকেই আমি তারামনকে খুঁজতে থাকি। ”

“তাকে খোঁজার জন্য আমি মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের অধীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ, রংপুর জেলার কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন লোকের কাছে হাজারখানেক চিঠি লিখি। প্রায় ৮ বছর খোঁজার পর ১৯৯৫ সালের দিকে আমি তার সন্ধান পাই। রংপুর জেলার কুড়িগ্রাম উপজেলার রাজীবপুর এলাকার অধ্যাপক সবুর ফারুকী তারামনের সন্ধান দেন। ” 

বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ বলতে থাকেন, “তার (তারামনের) সন্ধানে আমি সবুর ফারুকীর বাড়িতে চলে যাই। পরের দিন সকালে তারামনের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাইনি। পরে ওই এলাকার সোলায়মান সরকার নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তারামনের সঙ্গে দেখা হয়। সেখানে আমি তারামনের সঙ্গে কথা বলি। প্রয়োজনীয় নোট নেই। ”

“তোমার নাম কী, বাবার নাম কী এমন না হলেও ৫০টি প্রশ্ন করি। আবার কুড়িগ্রামের রাজীবপুরের শংকর মাধবপুরের তারামনের বাড়িতে যাই। তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। নিশ্চিত হই এটাই তারামন বিবি বীর প্রতীক। ’”

অধ্যাপনার ফাঁকে ফাঁকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতেন অধ্যাপক বিমল। তিনি বলেন, “তারামনকে আমি বললাম, তুমি বীর প্রতীক। কিন্তু সে এই শব্দের অর্থ বুঝতো না। এটা যে একটি উপাধি, সম্মান সেটা আমরা সবাই মিলে তাকে বোঝালাম। ” 

ধরা গলায় অধ্যাপক বিমল কান্তি দে বলেন, “তারামন চেয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রাপ্য সম্মান পাক। সে একজন অশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও দেশকে শত্রুমুক্ত করার চেতনা ছিলো তার মনে। ”

দীর্ঘ দিন যাবত শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের সমস্যায় ভোগার পর গত ৩০ নভেম্বর রাত দেড়টার দিকে রাজীবপুর উপজেলার কাচারিপাড়া গ্রামে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তারামন বিবি। শনিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে নামাজে জানাজা শেষে নিজ বাড়ির আঙিনায় চির নিদ্রায় তাকে সমাহিত করা হয়।  

[অধ্যাপক বিমল কান্তি দে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৯৯ সালে তিনি নেত্রকোণা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর নেন। যখন তারামন বিবিকে তিনি আবিষ্কার করেন তখন তার বয়স ৫৫ বছর। অধ্যাপক বিমল নিজের ছেলের চিকিৎসার জন্য বর্তমানে কলকাতার শিয়ালদহে অবস্থান করছেন। সেখানেই তিনি পেয়েছেন কিংবদন্তি তারামন বিবির মতো নক্ষত্রের খসে পড়ার দুঃসংবাদ। ]

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৮ 
এমএএএম/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।