ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এই দিনে মুক্ত হয় মাদারীপুরের রাজৈর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৮
এই দিনে মুক্ত হয় মাদারীপুরের রাজৈর টেকেরহাট এলাকায় যুদ্ধ হয়। ছবিতে বর্তমান সময়ের টেকেরহাট ব্রিজ

মাদারীপুর: ৪ ডিসেম্বর, মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় উপজেলাটি।

তবে রাজৈর মুক্ত দিবস উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না। শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই উপজেলায় নেই কোনো স্মৃতিস্তম্ভও।

 

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে রাজৈরে পাক হানাদার বাহিনী আস্তানা গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে আগস্ট মাসের প্রথম দিক থেকে হানাদারদের ওপর আক্রমণ করতে শুরু করেন।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। মধ্যরাত পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধের পর রাজৈর উপজেলা থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ছাগলছিড়া এলাকায় পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। ৪ ডিসেম্বর ভোরে সেখান থেকে বন্দি হয় ১৩৫ জন পাক হানাদার। বিজয়ের পতাকা ওড়ে, শত্রুমুক্ত হয় রাজৈর উপজেলা।  

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজৈর উপজেলার পাখুল্যা, লাউসার, কদমবাড়ি, কমলাপুর, মহিষমারী, ইশিবপুর, কবিরাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ওই সব অস্থায়ী ক্যাম্প থেকেই পাক বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

রাজৈরে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর মুক্তিকামী মানুষের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। একদিনে খালিয়ার সেন্দিয়ার আখ ক্ষেত ও জঙ্গলে পালিয়ে থাকা ১৩১ জন মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে তারা।

পাকবাহিনী ও স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয় রাজৈর বড় ব্রিজ, আমগ্রাম ব্রিজ ও টেকেরহাটে। পাখুল্যায় মুখোমুখী যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। এই সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন কর্নেল (অব.) সরোয়ার হোসেন মোল্যা।

জানা গেছে, পাখুল্যায় সকাল ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সম্মুখযুদ্ধ হয় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে। এছাড়া ১৯৭১ সালের ঈদের আগের রাতে রাজৈর উপজেলার বৌলগ্রামে পাক বাহিনীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে পরাস্ত হয়ে ৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে পাকবাহিনী রাজৈর ছেড়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে পালিয়ে যায়।

পরের দিন ৪ ডিসেম্বর গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় ১৩৫ জন পাক হানাদারকে আটক করেন মুক্তিযোদ্ধারা। শত্রুমুক্ত হয় রাজৈর উপজেলা।

রাজৈর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সেকান্দার আলী বলেন, বর্তমান প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে রাজৈর শত্রুমুক্ত হয়েছে। রাজৈরে একটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা প্রয়োজন। যাতে করে বর্তমান প্রজন্ম এই স্মৃতিস্তম্ভ দেখে উপলদ্ধি করতে পারে।

দিবসটি উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি নেই কেন জানতে চাইলে রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহানা নাসরিন বলেন, আমি নয় মাস হলো রাজৈরে যোগদান করেছি। মুক্ত দিবসের বিষয়টি আমার জানা ছিল না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।