ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শীতেও থেমে নেই গ্রামীণ জনজীবন 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২০
শীতেও থেমে নেই গ্রামীণ জনজীবন 

বগুড়া: প্রচণ্ড শীত, ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো চারপাশ। এর মধ্যেও থেমে নেই গ্রামীণ জনপদের জীবন। বসে থাকার কোনো উপায় নেই এসব জনপদের মানুষগুলোর। ভোর হতে না হতেই তাদের ছুটতে হয় নিজ নিজ কাজে। 

সারা দেশের গ্রামীণ জনপদের মতো বগুড়াতেও এই একই দৃশ্য চোখে পড়ে। সরেজমিনে শাজাহানপুর উপজেলার জালুশকা গ্রামে গিয়েও দেখা যায়, প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে ঘরে-বাইরে কাজ করে চলেছে সব বয়সী নারী ও পুরুষ।

 

ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বাইপাস সড়ক থেকে উত্তরে মাদলা বাজার দিয়ে আঁকাবাঁকা পথ ধরে এগোলেই জালশুকা। গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়বে দুচোখ ছাপানো বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। পাকা সড়কের দুপাশ দিয়ে নেমে গেছে অজস্র মেটোপথ। আর সেসব পথের পাশে গজিয়ে ওঠা ঘাসে ঘাসে জমে আছে শিশিরের দানা।  

পাকা সড়কের একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে বিশাল খাল। আরেক পাশে ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে পাতাঝরা গাছ। কুয়াশাচ্ছন্ন চারপাশ। সূর্য কেবলই উঁকি দিচ্ছে। খালের পানিতে চিকচিক করছে সেই আলো।

জালুশকা গ্রামে সূর্যোদয়।  ছবি- বাংলানিউজ

গায়ের কাপড়ের বাধ না মেনে হাড় কাঁপিয়ে যাচ্ছে ঠাণ্ডা-হিম শীতের বাতাস। শীতে বাঁকা হয়ে যেতে চাইছে শরীর। এরই মধ্যে দড়ি হাতে ভেড়ার পাল নিয়ে মাঠে ছুটে চলেছেন রহিম মিয়া নামের এক বৃদ্ধ। ছুটছেন রিনা বেগম নামে আরও এক নারী।

ভোর হতে না হতেই এসব মানুষকে ছুটতে হয় গোয়াল ঘরের দিকে, নারীরা লেগে যান ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার কাজে। এরই মধ্যে তড়িঘড়ি সেরে ফেলতে হয় রান্নার কাজটাও। কোনো রকম খাবার মুখে দিয়েই অনেককে গবাদি পশু নিয়ে ছুটতে হয় মাঠে।

ঘুম থেকে উঠে প্নেক শিশু-কিশোরও মাঠে ছুটে বেড়ায় গরু, ছাগল বা ভেড়ার পাল নিয়ে। কৃষক ছোটে ফসলের মাঠে। কারো হাতে কোদাল-পাচুন, কারো কারো কাঁধে ভার ও টুপরি। সংসারের কাজ শেষে নারীদেরও মাঠের ছোটখাটো বিভিন্ন কাজ করতে দেখা যায়। ওদিকে গাছে গাছে ডেকে চলেছে ফিঙে, শালিক, বুলবুলি, কবুতরের দল।  

গ্রামের কৃষক আজাদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দরিদ্র পরিবারের মানুষ। তাই দিনের কাজ দিনেই করতে হয়। একদিনের কাজ ফেলে রাখলে ওই দিনটাই সংসারের জন্য ঘাটতি থাকলো। এ অবস্থায় শীতের কথা ভাবলে পেটে ভাত যাবে না। কষ্ট স্বীকার করেই বেঁচে থাকার লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।

শেখ আলী হাসান নামে আরেক কৃষক বলেন, দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। জমি দেখভাল করতে হয় প্রতিদিন। শীতের চিন্তা করলে ঘরে আর ফসল উঠবে না। অর্ধেক ফসলই নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে শীত না মেনেই প্রতিদিন ক্ষেতে যেতে হয়।

গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল আলম জানান, এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। কর্ম করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। কেউ জমি চাষ করে, কেউবা গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি পালন করে। আবার অনেকেই দিনমজুরের কাজ করে। ফলে প্রতিদিনই শীত উপেক্ষা করে তাদের জীবনসংগ্রামে নামতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২০
কেইউএ/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।