চালক তৈরির প্রকল্পে খোরাকি খরচ বেশি হওয়ায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। চলতি সময় থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিড় (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে। সভায় প্রকল্পের বিভিন্ন খাতবাবদ প্রস্তাবিত ব্যয় যৌক্তিক করা প্রয়োজন বলে মত দেয় পরিকল্পনা কমিশন।
সভায় পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ প্রধানের সভাপতিত্বে সড়ক পরিবহন উইং, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), বিআরটিসি, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের (এএফডি) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে প্রকল্পের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, এ প্রকল্পের খোরাকি খরচ কমানো হবে। একই সঙ্গে পোশাকের খরচও কমানো হবে। এ বিষয়ে আমরা একটা কমিটি গঠন করেছি। সংশ্লিষ্ট বিভাগকেও বলেছি যে, ব্যয় যৌক্তিক করতে হবে।
বিআরটিসি সূত্র জানায়, ৩ লাখ চালক তৈরির খাতে ৩৮৪ কোটি টাকা খোরাকি খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দৈনিক একজন চালককে ৩০০ টাকা খাওয়া ও ৫০০ টাকা হাত খরচ দিতে হবে, এটি খোরাকি খরচের মধ্যে রয়েছে। সব মিলিয়ে ৩ লাখ ভারী যানবাহন চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ৩৮৪ কোটি টাকার খোরাকি ভাতা দেওয়া হবে। এছাড়া ১৫ কোটি টাকার পোশাক ভাতা দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণের জন্য ১২৫ কোটি টাকার প্রশিক্ষণ ভাতার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত ৫০টি ড্রাইভিং সিমুলেটর কেনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিআরটিসির জন্য ২১টি এবং এএফডির জন্য ১২টিসহ মোট ৩৩টি ড্রাইভিং সিমুলেটর কেনা হবে।
চালকদের প্রশিক্ষণের সময়সীমা ২ সপ্তাহ ও ৪ সপ্তাহ। যারা হাল্কা যানবাহনের লাইন্সে দিয়ে ভারী গাড়ি চালাচ্ছেন তাদের ২ সপ্তাহ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাদের হাল্কা যানবাহনের লাইসেন্স আছে, হাল্কা যানবাহন চালাচ্ছেন কিন্তু ভারী গাড়ি চালাতে ইচ্ছুক তাদের ৪ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এর জন্য ৬১টি জেলায় ১৬৪টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকবে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে জেলায় জেলায় প্রশিক্ষণপ্রার্থীদের নির্বাচিত করা হবে। ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিতে কোনো ধরনের টাকাপয়সা নেওয়া হবে না। উল্টো ড্রাইভিং শিখতে এলে দৈনিক ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। কোনো খরচ ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে।
‘এ প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর ন্যূনতম ৬০ হাজার দক্ষ চালক তৈরি করা হবে। এর ফলে মানব সম্পদের উন্নয়ন, যানবাহন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা যাবে। সাশ্রয়ী ভাড়া, আরামদায়ক, আধুনিক ও নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা, সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার মাধ্যমে সঠিক সেবা দেওয়াও অন্যতম উদ্দেশ্য। অথচ খোরাকি খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। ’
৩৮৪ কোটি টাকা খোরাকি খরচ ধরা প্রসঙ্গে বিআরটিসির ম্যানেজার (প্ল্যানিং) আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, বাজেট এখনও ঠিক হয়নি। প্রকল্পটি নিয়ে একটা পিইসি সভা হয়েছে। আমরা সবকিছু নিয়ে একটা হিসাবনিকাশ করছি। খোরাকি খরচের মধ্যে দৈনিক খাওয়া বাবদ ৩০০ টাকা ও হাতখরচা ৫০০ টাকা দেওয়া হবে। একজন চালক সব কাজ ফেলে রেখে সারাদিন প্রশিক্ষণ নেবেন, ফলে এর থেকে কম টাকা দেওয়া যায় না। তারপরও প্রকল্পটি নিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে বাস ও ট্রাকসহ মোট দুই লাখ ৫০ হাজার ৮০৩টি ভারী যানবাহন রয়েছে। এসব যানবাহনের মধ্যে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৭৩টিতে বৈধ চালক রয়েছে। অর্থাৎ ৬৭ হাজার ৩০টি বাস ও ট্রাকের স্টিয়ারিং অবৈধ চালকের হাতে। ভারী লাইসেন্স না থাকলেও তারা দিব্যি গাড়ি চালাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই ৬৭ হাজার ভারী যানবাহন এখন মৃত্যুকূপ। দ্রুততম সময়ে এসব যানবাহন দক্ষ ও লাইসেন্সকৃত চালকের হাতে না দিলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। প্রতিটি যানবাহনে একজন করে চালক নিয়োজিত থাকলে ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে দেশে চালকের ঘাটতি রয়েছে ৬৭ হাজার ৩০ জন।
বিআরটিএ জানায়, প্রতিটি ভারী যানবাহনের জন্য গড়ে দেড়জন চালক দরকার। তবে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিটি ভারী যানবাহনের জন্য দুইজন করে চালক নিয়োজিত থাকার কথা। সে হিসেবে বর্তমানে রাস্তায় চলমান ভারী যানবাহন জন্য এক লাখ ৩৪ হাজার ৬০ জন চালকের ঘাটতি রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২০
এমআইএস/এইচজে