বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০১৯-২০ সালের বাজেটের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষন সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী।
এসময় অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে আদায় হয়েছে ৫৫ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৫ শতাংশ কম। এ সময়ে কর রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ০.৭ শতাংশ বেড়েছে এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব আহরণের পরিমাণ কমেছে ৪৫.১ শতাংশ।
রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে রাজস্ব আহরণে গতি আনবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মুস্তফা কামাল বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট সরকারি ব্যয় বেড়েছে ১৫.০৩ শতাংশ। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩.৩ শতাংশ এবং বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ৮.৩ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ছিল ৭.৯ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হয়েছে। এনবিআরের তথ্য মতে এর বাস্তবায়নে প্রস্তুতিজনিত কারণে প্রথম প্রান্তিকে এনবিআর কর রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.৬২ শতাংশ। প্রবাস আয়ে প্রবৃদ্দি হয়েছে ১৬.৫৯ শতাংশ, যা বিগত একই সময়কালে ছিল ১৪.০৯ শতাংশ। সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনার সিদ্ধান্তের কারণে প্রবাস আয় বিপুলভাবে বেড়েছে এবং আগামীতে এ খাতে প্রবৃদ্ধির মাইলফলক অর্জিত হবে বলে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩১.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৯.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। প্রথম প্রান্তিক শেষে রফতানি আয় হ্রাস পেয়েছে ২.৯৪ শতাংশ। বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দা ও অস্থিরতার কারণে রপ্তানি সামান্য হ্রাস পেলেও যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে তা প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, আমদানি ব্যয় ২.৫৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১৪.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। রপ্তানিমুখী খাতের পণ্য আমদানি কিছুটা কম হওয়ায় সাময়িকভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া মন্ত্রী আরও জানান, আমদানি ঋণপত্র খোলা হ্রাস পেয়েছে ৪.৭৩ শতাংশ। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের চেয়ে কমে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর সময়ে ৫.৪৯ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ৫.৪৩ শতাংশ হতে বেড়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর সময়ে দাড়িয়েছে ৫.৫৪ শতাংশ।
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের ধীরগতি দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। সরকারি মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং বেসরকারি ঋণ প্রবাহে গতি সঞ্চার হবে। সঞ্চয়পত্রে সংস্কার কার্যক্রমের ফলে বিক্রি কমে গেছে। এতে করে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে বলেও সংসদ অধিবেশনে জানান মুস্তফা কামাল।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২০
এসকে/এসই