অনেক পণ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয়টি ক্রেতাদের পছন্দ করাটাই যেন মুশকিল! কিন্তু দরদামের কোন সুযোগ নেই। কারণ প্রত্যেক আইটেমের দাম মাত্র ১৩০ টাকা।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে বগুড়া শেরপুর রোডে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল মাঠে আয়োজিত মাসব্যাপী তাঁত বস্ত্র ও হস্ত কুঠির শিল্প মেলায় চায়না প্যাভিলিয়নে গেলে বেচা-কেনার এমন দৃশ্য দেখা যায়।
মেলায় ঘুরতে আসা আহসান হকের সঙ্গে শিশু আনিকা ঘোরাঘুরি করছিল। খেলনা গাড়ি নাড়াচাড়া করে দেখছিল শিশুটি। মাকে হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে একটি একটি খেলনার বাস-গাড়ি দেখায়। দোকানি মো. সানি ওই খেলনা শিশুটির হাতে তুলে দেয়। পছন্দের গাড়ি হাতে পেয়ে সে আহ্লাদে মেতে ওঠে।
পরে আহসান হক দাম জানতে চাইলে,‘দোকানি বলে ১৩০ টাকা’। কম হবে কি? উত্তরে দোকানি মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দেন। এরপর দোকানির হাতে ১৩০ টাকা গুণে দেন বাবা আহসান হক। সঙ্গে বাসগাড়ির মালিক বনে যায় ওই শিশুটি।
আরেক দোকানি মো. এনামুল বাংলানিউজকে জানান, এই প্যাভিলিয়নে প্রায় দুই হাজার আইটেমের পণ্য রয়েছে। এরমধ্যে ২০০ অধিক রকমারি প্লাস্টিক পণ্য, কাঁচের পণ্য ২০০ অধিক, খেলনা সামগ্রীর কোনো হিসেব নেই। রয়েছে নানা আইটেমের কসমেটিকস সামগ্রী। স্টিলের সামগ্রীর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মাদুর রয়েছে। এছাড়া সংসারের যাবতীয় কাজের ছোট-বড় প্রায় সব ধরনের পণ্য তাদের দোকান রয়েছে।
দোকানিরা বাংলানিউজকে জানান, এখানে দরদাম করার কোনো সুযোগ নেই। সব ধরনের পণ্য একদামে বেচাকেনা হয়। পরিবেশক ফয়সাল এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো. ফয়সাল হোসেনের ব্যবসার ধরন এমনটা বলেও জানানো হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় অনেক দোকানের মধ্যে একটি দোকানের সামনে নারী ও পুরুষের ভিড় বেশি। সামনে গিয়ে দেখা গেলো দোকানটিতে প্রায় ২০-২৫ পদের আচারের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। দোকান মালিক আচার বিক্রিতে তখন ব্যস্ত। দোকানের ভেতরে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে আচার ভর্তি কাচের বয়াম। এভাবে আচারের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকান মালিক মো. মোস্তফা হোসেন। রংপুরের ঐতিহ্যবাহী আচার নামে পরিচিত ‘শাকিল আচার’খ্যাত হরেক পদের আচার খেতেও নাকি বেশ সুস্বাদু এমনটাই জানালেন একাধিক ক্রেতা সাধারণ।
শাকিল আচারের দোকানে তেঁতুল, বড়ই, আম, চালতা, রসুন, আমলকি, জলপাই, আমফলসি, হরতকি, ত্রিফল, জামরুল, কদবেলসহ যাবতীয় ঝাল-মিষ্টি-টক আচার পাওয়া যাচ্ছে।
চৈতি আক্তার নামে এক ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, বাড়িতে এসব আচার তৈরি করা যায়। কিন্তু এতো পদের আচার তৈরি করতে গেলে অনেক কিছুর প্রয়োজন। যে কারণে বাড়িতে আচার তৈরি করা হয়ে ওঠে না তার। কিন্তু আচার দেখলে তো আর খাওয়ার লোভ সামলানো যায় না। তাই কয়েক পদের আচার কেনেন তিনি।
ফারিহা, উর্মি জেসি, শিলা মনি, রুমি বেগম, সানজিদা খানমসহ একাধিক নারী ক্রেতা আচার কেনা সম্পর্কে একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে শাহীন হোসেন, রাজ্জাক, সামসুল হক, মিলন আলমসহ বেশ কয়েকজন পুরুষ ক্রেতা জানান, যদিও নারীদের কাছে আচার বেশি লোভনীয়। কিন্তু মেলায় ঝাল-মিষ্টি-টক আচার দেখে জিভে জল এসেছে তাদেরও। তাছাড়া বাড়িতে এতো গুলো আচার একসঙ্গে বানানো সম্ভব না। তাই প্রথমে তিনি নিজে কিছু খেলেন এবং বাড়ির জন্য কয়েক ধরনের আচার কিনেছেন।
বেচাবিক্রির ফাঁকে শাকিল আচারের মালিক মোস্তফা হোসেন বলেন, প্রতি কেজি আচার ৪০০ টাকা। বিকেল থেকে বিক্রি শুরু হয়ে চলে রাত পর্যন্ত। মেলা শুরুর দিকে তেমন একটা বেচাকেনা ছিল না। কিন্তু একটি করে দিন অতিবাহিত হচ্ছে আর বিকিকিনি বাড়ছে।
মেলা আরও কিছুদিন চলবে তাই এখন শেষদিকে এসে ভালো বিকিকিনি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) মাসব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। বগুড়া ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত মণিপুরি তাঁতি শিল্প ও জামদানি বেনারসি কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সার্বিক সহযোগিতায় মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২০
কেইউএ/জেআইএম