ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিএনজি অটো চালকের আড়ালে চলতো ছিনতাই-কিলিং মিশন!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২০
সিএনজি অটো চালকের আড়ালে চলতো ছিনতাই-কিলিং মিশন!

ঢাকা: দিন গড়িয়ে অন্ধকার নামলেই শুরু হতো, আর শেষ হতো পরের দিনের আলো ফুটে ওঠা পর্যন্ত। রাত আটটা থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সিএনজি যাত্রীদের ছিনতাই ও হত্যার এমন কিলিং মিশন নিয়ে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় নামতেন সিএনজি অটোরিকশা চালক নূরুল ও তার সহযোগীরা। এক রাতে সর্বোচ্চ ছয়টি ছিনতাই এবং একাধিক ব্যক্তিকে হত্যার রেকর্ড আছে এই চক্রের। 

সিএনজি অটোরিকশা যাত্রীদের টার্গেট করে গড়ে ওঠা এমনই এক চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ। চক্রের মূল হোতা নূরুল ইসলামসহ বাকিরা হলেন তার দুই সহযোগী আবদুল্লাহ বাবু ও জালাল।

 

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) গণমাধ্যমকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল ফারুক।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) টঙ্গী থেকে নুরুলকে এবং তার দেওয়া তথ্য থেকে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) গাজীপুরের তুরাগ এলাকা থেকে অপর দুই সহযোগীকে আটক করে পুলিশ। তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের এডিসি হাফিজ আল ফারুকের নেতৃত্বে এসি মঈনুল ইসলাম, হাতিরঝিল থানার ইন্সপেক্টর মহিউদ্দীন, এসআই মবিন, এসআই খায়রুল এএসআই তরিক এ অভিযানে অংশ নেন।  

হাফিজ আল ফারুক বলেন, গ্রেফতার নুরুল ইসলাম মূলত সিএনজি অটোরিকশা চালক। সিএনজি চালনোর আড়ালে তার মূল পেশা ছিনতাই। নুরুল ইসলামসহ আরো আটজন মিলে তারা গড়ে তুলেছে সিএনজিকেন্দ্রিক দু’টি ভয়ংকর ছিনতাই ও কিলিং গ্রুপ। রাত আটটার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত আশুলিয়া, আবদুল্লাহপুর, উত্তরা, গুলশান, ভাটারা, খিলক্ষেত, বাডডা, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, রামপুরা, ৩০০ ফিট, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড এলাকা চলতে থাকে তাদের অপকর্ম।  

গ্রেফতার নুরুল ইসলাম জানান, তিনি ৫-৬ মাস ধরে প্রায় ৬শ ছিনতাই করেছেন। তার সহযোগী ৫-৬ জন আছেন যারা প্রায় ৩-৪ বছর ধরে ছিনতাই করছে। অনেকেই ২০০০-২৫০০ ছিনতাই করেছে। রাত ৮টায় বের হয়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত কমপক্ষে একটি থেকে সর্বোচ্চ ছয়টি পর্যন্ত ছিনতাই করার রেকর্ড রয়েছে।  

ইতোমধ্যে নূরুল ও তার সহযোগীরা বেশ কিছু ছিনতাইয়ের ঘটনা ও হত্যার কথা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন হাফিজ আল ফারুক।  

১০ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে ৬ জানুয়ারি ২০২০। রাজধানীর ভিন্ন ভিন্ন ফ্লাইওভারে পাওয়া গেছে চারটি মরদেহ। প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের ধরন একই রকম। সবার গলায় গামছা বা মাফলার পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর আক্তার হোসেন নামে এক স্বর্ণকারকে হত্যার পর মরদেহ ফেলে রাখা হয় কুড়িল ফ্লাইওভারে। ৩১ ডিসেম্বর খিলক্ষেত ফ্লাইওভারে ওঠার পথের ডানপাশে এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া যায়। ৩ জানুয়ারি ২০২০ কুড়িল বিশ্বরোড সংলগ্ন ফ্লাইওভারে মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া যায়। সবশেষ ৬ জানুয়ারি মগবাজার ফ্লাইওভারের উপরে সোনারগাঁও প্রান্তে রেলক্রসিং বরাবর মিজানুর রহমানের মরদেহ পাওয়া যায়।  

গ্রেফতার নূরুল ইসলাম ও তার সহযোগী দুই ছিনতাইকারী চারটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে আদালতে স্বীকারাক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন নূরুল ইসলাম। মূলত সিএনজি অটোরিকশায় যাত্রী হিসেবে উঠিয়ে ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় তাদের হত্যা করা হয়েছে।  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অধিক্ষেত্রের বাইরে দু’টি এলাকায় গত দুই মাসে তারা আরো চারটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে নূরুল ইসলাম স্বীকার করেছে।  

পাশাপাশি ছিনতাইয়ের পর অজ্ঞান বা অর্ধমৃত অবস্থায় ৩০-৪০ জন যাত্রীকে বিভিন্ন ফ্লাইওভার বা নির্জন অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে সিএনজি থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন নূরুল ইসলাম। এদের মধ্যে ৮-১০ জন বাস-ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছে।  

এ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে দাবি পুলিশের।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২০
এসএইচএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।