মঙ্গলবার ( ২৮ জানুয়ারি) ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
এতে উল্লেখ করা হয়, আগামী ২ ফেব্রয়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবসের প্রাক্কালে বিশ্বের বৃহত্তম এ ম্যানগ্রোভ অরণ্যে রাষ্ট্রদূত মিলারের সফর সুন্দরবন এবং এর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে।
মিলার যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডক্টরেট শিক্ষার্থীর সঙ্গে কটকা পরিদর্শন করেন। ওই শিক্ষার্থীর বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস অর্থায়ন করেছে। তারা জনপ্রিয় কটকা ট্রেইল ধরে কিছু অংশে হাইকিং করেন এবং সুন্দরবনে পর্যটনের ভূমিকা ও এর প্রভাব সম্পর্কে অবগত হন।
সফরের শেষ দিনে রাষ্ট্রদূত মিলার স্থানীয় নাগরিক সংস্থা ওয়াইল্ড টিম লিমিটেডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তিনি তাদের কাছ থেকে জানতে পারেন, ২০১৮ সালে শেষ হওয়া ইউএসএআইডির দেড় কোটি ডলার ব্যয়সাপেক্ষ ‘বেঙ্গল টাইগার কনজারভেশন অ্যাক্টিভিটি (বাঘ)’ কর্মসূচির পর কীভাবে বাঘ সংরক্ষণ কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশ বন বিভাগ এবং ইউএসএআইডি গত বছরের ২২ মে ঘোষণা করে, ইউএসএআইডির ‘বাঘ’ কর্মসূচি ও সুন্দরবন রক্ষার সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ এ বনে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা স্থিতিশীল হয়েছে এবং সামান্য হলেও বেড়েছে। ২০১৫ সালের আনুমানিক ১০৬টি থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে তা আনুমানিক ১১৪টি হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গেও সাক্ষাত করেন। তাদের মধ্যে ছিল গ্রামের ‘টাইগার রেসপন্স’ দলের সদস্য, বাঘ দূত, বাঘ স্কাউটস, সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠন এবং কমিউনিটি টহল গ্রুপের সদস্যরা। ইউএসএআইডির বাঘ এবং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড লাইভলিহুড (সিআরইএল) কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে স্থানীয় এ সংগঠনগুলোকে সুন্দরবন এবং এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রশিক্ষণ দিতে সহায়তা করেছে। সিআরইএল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বনের ৫১২ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ম্যানগ্রোভ গাছের চারা রোপণে সহায়তা করা। রোপিত গাছের প্রজাতিগুলির মধ্যে রয়েছে কাঁকড়া, বাইন, সুন্দরি, কেওড়া ও গোলপাতা। পরিবেশ সংরক্ষণ উদ্যোগে সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রে সবুজ বনানী, মূল্যবান বাস্তুসংস্থান এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সহনশীলতা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের প্রচেষ্টা বাংলাদেশের জন্য একই ধরনের উপকার বয়ে আনে। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা জোরদার করে এবং এমন বাস্তুসংস্থানকে সুরক্ষা দেয় যা কেবল বাংলাদেশই নয়, বরং সমগ্র পৃথিবীর ভালো থাকার জন্যই জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সহনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং উভয় দেশের অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলোকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্ব জলাভূমি দিবস বিশ্বজুড়ে জলাভূমিগুলো পরিবেশ সংরক্ষণে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তা তুলে ধরে। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুসংস্থানগুলোর সুরক্ষা এগিয়ে নিতে জলাভূমিগুলো কেন গুরুত্বপূর্ণ এ দিবস তা জোর দিয়ে প্রকাশ করে। সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এটি জলাভূমির গুরুত্ব প্রদর্শনের জন্য এক উপযুক্ত স্থান। গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চলটি ঘূর্ণিঝড়ের মতো বিপদ থেকে সুরক্ষা দিতে প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করে। এছাড়া সুন্দরবন বেঙ্গল টাইগার, মাস্কড ফিনফুট, ইরাবতী ডলফিন, নোনা পানির কুমির এবং আরও অনেক বিপন্ন বা ঝুঁকির মধ্যে থাকা প্রাণীর আবাসস্থল।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২০
টিআর/এফএম