বুধবার (২৯ জানুয়ারি) টিআইবির ওই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর জরুরি ব্রিফিংয়ে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী।
টিআইবিকে উদ্দেশ্য করে রেজাউল করিম বলেন, হয়তো কারো দেওয়া ভুল তথ্যের ভিত্তিতে জনবান্ধব একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে (রাজউক) হেয় প্রতিপন্ন করে বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা।
‘সংবাদপত্রে টিআইবির প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে যে খবর এসেছে সেখান থেকে আমি অবহিত হয়েছি, টিআইবি দাবি করেছে, রাজউকে সেবা নিতে গেলে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ লাগে। এই বক্তব্যটি কোনোভাবে সত্য নয়, এর কোনো ভিত্তি নেই। একটি অভিযোগ তারা বলেছে, বিশেষ প্রকল্পের ক্ষেত্রে রিয়েল স্টেট ডেভলপারকে ১৫ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এ জাতীয় কোনো প্রকল্পের অনুমোদনই হয়নি। আমি এক বছরের বেশি সময় আগে মন্ত্রী হয়েছি। বিশেষ প্রকল্পে ১৫ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়, এই তথ্য তারা কোথায় পেল? এই জাতীয় কোনো প্রকল্পই তো পাস করা হয়নি। ’
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, তারা (টিআইবি) বলেছে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের কথা। আমি মন্ত্রী হওয়ার পর আজ পর্যন্ত কোনো নিয়োগই হয়নি। নিয়োগ না হলে রাজনৈতিক প্রভাবের অবকাশ আসলো কোথা থেকে। নিয়োগের জন্য আবেদন করা হয়েছে, আমরা এখন পর্যন্ত অ্যাডমিট কার্ডও ইস্যু করিনি। এর ভিতরে তারা বললো, নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কথা। এটাকে তারা দুর্নীতির সপক্ষে একটি অভিযোগ হিসেবে উত্থাপন করেছে।
‘ফ্ল্যাটের চাবি প্রদানের ক্ষেত্রেও নাকি টাকা দিতে হয়, এমন অভিযোগ তুলেছে টিআইবি। একবারই মাত্র উত্তরায় থার্ড ফেজে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজউকে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে লটারি করে সেই চাবি দেওয়া হয়েছে। যারা অ্যাবসেন্ট ছিলেন, তারা পরবর্তী সময়ে চাবি নিয়েছেন। তাই টাকা নিয়ে চাবি দেওয়ার অভিযোগ যথার্থ নয়। ’
টিআইবির প্রতিবেদন নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিবাদ জানানো হবে কিনা জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, টিআইবি এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নয় যে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে। তারা তো আমাকেই কোনো অভিযোগের ব্যাপারে জানায়নি। এটা তারা অনুমানভিত্তিক করেছে। আমি তাদের প্রতিবেদনের ব্যাপারে গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। সেজন্য গণমাধ্যমের মাধ্যমেই জানালাম তাদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এটি অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এ ব্যাপারে মানহানির মামলা বা অভিযোগ করা হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি বিষয়টি আজকেই জেনেছি, কিছুক্ষণ আগে। আমরা বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
এর আগে দুর্নীতি বন্ধে দুদকের সুপারিশ কতোটা বাস্তবায়ন হয়েছে জানতে চাইলে রেজাউল করিম বলেন, দুদক আমাদের কিছু গাইডলাইন দিয়েছিল, এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ১৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছি। সেই নির্দেশনার আলোকে আমাদের চলমান কর্মকাণ্ডে অনেক বেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এসেছে।
রেজাউল করিম আরও বলেন, এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি রাজউকে নতুন চেয়ারম্যান এসেছেন। উনি এসে স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন। আমি আশা করবো টিআইবি এ জাতীয় কোনো অভিযোগ তোলার আগে আমাদেরও জানাবে। কী অভিযোগ, কাদের কাছ থেকে তা পেয়েছে ইত্যাদি। টিআইবি জানালে নিশ্চয়ই তাদের আমরা সাহায্য করতে পারতাম।
‘প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। আমরা সেটাকে শক্ত ও কঠোরভাবে ধারণ করেছি। এখনও যে সব অনিয়ম দূর হয়ে গেছে, এ কথা বলা যাবে না। তবে যে সব দুর্নীতির অভিযোগ ছিল এর অধিকাংশই আমরা বিনাশ করেছি। আগামীতেও করতে চাই। ’
প্রতিবেদনে টিআইবি জানিয়েছে, রাজউকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছাড়পত্র-নকশা অনুমোদনে দালালের মাধ্যমে চুক্তি হয়ে থাকে। রাজউকের কর্মকর্তা, দালাল ও সেবাগ্রহীতার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে চুক্তি করে সুনির্দিষ্ট হারে নিয়ম বহির্ভূত অর্থ নেওয়া হয়। এছাড়া সেবাগ্রহীতাকে ইমারতের নকশা অনুমোদনে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২০
জিসিজি/এইচজে