রংপুর: তিস্তা নদীর ভাঙন রোধ, নদী পুনঃখনন, তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা, ভাঙন কবলিত হাজার হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের দাবিতে ২৩০ কিলোমিটারব্যাপী মানববন্ধন করেছেন তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার মানুষ।
রোববার (১ নভেম্বর) রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকার দুই ধারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে তিস্তা নদীতে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
তিস্তা নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশে প্রবাহিত হয় প্রায় ১১৫ কিলোমিটার। এই ১১৫ কিলোমিটারের দুপাড়েই অর্থাৎ ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেলসেতু সংলগ্ন পয়েন্টে মানববন্ধনে সভাপতি উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বক্তৃতা দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ড. তুহিন ওয়াদুদ, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক নুরুজ্জামান খান প্রমুখ।
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর ডাউয়াবাড়ি পয়েন্টে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ছাদেকুল ইসলাম বক্তৃতা দেন।
নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার অভিঘাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে তা বৈশ্বিকভাবে যেমন করতে হবে তেমনি দেশীয়ভাবে তিস্তাসহ অন্য সব নদী সুরক্ষা করে অভিযোজসের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ করতে হবে। তিস্তাকে রক্ষা করা গেলে শুধু জলবায়ু বিষয়ক নয়, এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
বক্তব্যে ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, তিস্তা নদী ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার এবং দেশীয় পরিচর্যার অভাবে ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে। নদীটির বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যা করা সম্ভব হলে নদীটিও বাঁচবে, বাঁচবে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ফলে এ নদী রক্ষায় অর্থ ব্যয় করা দেশের জন্য লাভজনক।
নুরুজ্জামান খান বলেন, তিস্তা নদী রক্ষার কোনো বিকল্প নেই আমাদের। ভারত থেকে আমাদের পানি পেতে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি হতেই হবে।
বখতিয়ার হোসেন শিশির বলেন, নদীর পরিচর্যা এমনভাবে হতে হবে যাতে নদী এবং সম্পদ দুটোই রক্ষা পায়।
বক্তারা তিস্তা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। সবাই মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান। সমাবেশে ৬ দফা ঘোষণা উপস্থাপন করা হয়।
দফাগুলো হলো- তিস্তা নদীতে সারাবছর পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ বজায় রাখার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিস্তা নদীর সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মতভাবে খনন করতে হবে। অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি করতে হবে, তিস্তার ভাঙনে আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভাঙনের শিকার ভূমিহীন/গৃহহীনদের আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে, তিস্তা নদী সুরক্ষায় গ্রহণ করা মহাপরিকল্পনায় নদী ও নদী তীরবর্তী মানুষের স্বার্থ বজায় রেখে তা দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করতে হবে, তিস্তা নদীর শাখা-প্রশাখা-উপশাখাগুলোর সঙ্গে নদীর আগেকার সম্পর্ক ফেরাতে হবে। বর্ষার পানি ধরে রাখার জন্য পর্যাপ্ত জলাধার নির্মাণ করতে হবে, চরাঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং মহাপরিকল্পনা শিগগির বাস্তবায়ন করতে হবে।
এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে বক্তব্য দেন তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলাম কানু, আমিন বিএসসি, মোজফফর হোসেন, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, মাহমুদ আলম, মাহাবুব আলম, আমিনুর রহমান, সাদেকুল ইসলাম দুলাল, আব্দুন নুর দুলাল, বখতিয়ার হোসেন শিশির প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২০
আরএ