ঢাকা: করোনার কারণে অলসভাবে পড়ে আছে ৮৯ কোটি টাকা দামের গুঁড়া দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্ট বা কারখানার মূল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম। একই অবস্থা গুঁড়া দুধ মোড়কজাত করার যন্ত্রপাতি, ল্যাবরেটরি, মিল্ক রিসিভিং, প্রসেসিং, ক্রিম-বাটার প্রসেসিং যন্ত্রপাতিরও।
যে লক্ষ্য নিয়ে কারখানার কাজ এগিয়ে যাচ্ছিল, তার সব কিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন হচ্ছে না ‘সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ঘাটে গুঁড়া দুগ্ধ কারখানা‘ প্রকল্পের কাজ। ২০১৮ সাল থেকে প্রকল্পের আওতায় দুটি লটে ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গুঁড়া দুধ তৈরির প্লান্ট স্থাপনের যন্ত্রপাতি কেনা হয়।
ইতালি, জার্মানি, লিথুনিয়া ও ভারত থেকে এসব দামি যন্ত্রপাতি কেনা হয়। কিন্তু করোনার কারণে সেসব দেশ থেকে কোনো প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান আসছেন না। ফলে আমদানিকৃত মেশিনারিজ স্থাপন, কমিশনিং কিছুই হচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ব্যয় বাড়ানো ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।
মিল্কভিটার উপমহাব্যবস্থাপক (টেকনিক্যাল) মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, “এক লটে ৮৫ কোটি, অপর লটে ৪ কোটিসহ মোট ৮৯ কোটি টাকার মেশিনারিজ কেনা হয়েছে। সামনে আরও ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার মেশিনারিজ কেনা হবে। কিন্তু করোনার কারণে অনেক দেশের ফ্লাইট এখনো চালু করা হয়নি। ফলে বিদেশ থেকে প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ানরা আসতে পারছে না। ফলে ৮৯ কোটি টাকায় কেনা মেশিনারিজ পড়ে আছে। ”
তিনি জানান, এই প্লান্টে প্রতিদিন ২ লাখ লিটার তরল দুধ ব্যবহার করে ১৬ টন গুঁড়া দুধ উৎপাদন সম্ভব।
সূত্র জানায়, ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালে প্রকল্পটি অনেুমোদনর দেওয়া হয়। পরে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ১০৫ কোটি টাকা করা হয়। সময় বাড়ানোর পর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল।
সূত্র জানায়, করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ আবারও বাড়ানো প্রয়োজন। তাই ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ল্যাবরেটরি স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংকটের কারণে এটি স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ মেশিন স্থাপন না হওয়ার কারণে সোলার প্যানেল স্থাপনও সম্ভব হচ্ছে না।
তবে প্রকল্পের সিভিল কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে রেফ্রিজারেশন বিল্ডিংয়ের ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে, প্রসেস বিল্ডিং ছাদ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত এবং সাবস্টেশন বিল্ডিংয়েরে কাজ সমাপ্তের পথে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় প্রতিদিন ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৪৭১ লিটার তরল দুধ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে মিল্ক ভিটা ওই এলাকায় নিজস্ব প্রাথমিক দুগ্ধ সমবায় সমিতির মাধ্যমে মৌসুমভেদে দৈনিক আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে। কিন্তু বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ভরা মৌসুমে ওই এলাকায় অতিরিক্ত দুধ উৎপাদন হয়, যা অনেক সময় উদ্বৃত্ত থাকে। আবার বর্ষাকালে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সড়ক যোগাযোগ অনুকূলে না থাকায় ওই এলাকায় খামারিদের তরল দুধ বিপণনে সমস্যা হয়।
ফলে ওই দুই মৌসুমে খামারিরা নামমাত্র মূল্যে স্থানীয় বাজারে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হন। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্প এলাকার দুগ্ধ খামারিদের স্বার্থ রক্ষা ও গুঁড়া দুধ আমদানি কমানোর লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। অথচ করোনার কারণে আবারও এক বছর পেছালো গুঁড়া দুধ উৎপাদন কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২০
এমআইএস/এজে