নাটোর: নাটোরে বন্যা পরবর্তী ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং রবি ও খরিফ-১ এর ২০২০-২১ মৌসুমে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে এবার কৃষি প্রণোদনা পাচ্ছেন ১৬ হাজার ৬০০ জন কৃষক। এজন্য মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
কৃষিবিভাগ জানিয়েছেন, প্রণোদনা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৫০০ কেজি বোরো ধান বীজ, ৬০ হাজার কেজি গম বীজ, ৮ হাজার কেজি ভুট্টা বীজ, দেড় হাজার কেজি সরিষা, এক হাজার কেজি চিনাবাদাম, ২৫০ কেজি পেঁয়াজ বীজ ও ৫ হাজার ৫০০ কেজি গ্রীষ্মকালীন মুগ বীজ।
এছাড়া ২০ লাখ এক হাজার কেজি ডিএপি সার ও এক লাখ ৩৩ হাজার কেজি এমওপি সার রয়েছে। যার আর্থিক মূল্য বীজ বাবদ ১ কোটি ২৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং সার বাবদ ৪৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। কৃষক পর্যায়ে এসব প্রণোদনা সহায়তা পৌঁছাতে উপজেলা পর্যায়ে বিভাজন কাজও সম্পন্ন হয়েছে। খুব শিগগিরই কৃষকদের মধ্যে এসব প্রণোদনা উপকরণ বিতরণ করা হবে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় জেলায় রবি ও খরিপ- ১ এর ২০২০-২১ মৌসুমে ১৬ হাজার ৬০০ জন কৃষকের জন্য ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ১ কোটি ২৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকার ৯৯ হাজার ৭৫০ কেজি সাত প্রকারের বীজ ও ২৮ লাখ ১৪ হাজার টাকার
২০ লাখ এক হাজার কেজি ডিএপি সার ও ১৭ লাখ ২৯ হাজার টাকার ১৩ লাখ ৩ হাজার কেজি এমওপি সার রয়েছে।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে এসব সার ও বীজ বিতরণে বিভাজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২ হাজার ৫৪০ জন কৃষককে ১৪ হাজার ৫৬৫ কেজি বীজ, ৩৬ হাজার ৯০০ কেজি ডিএপি সার ও ২২ হাজার ৫০০ কেজি এমওপি সার রয়েছে। এজন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৯ লাখ ৯ হাজার ২৪০ টাকা।
নলডাঙ্গা উপজেলায় ২ হাজার ৬৪০ জন কৃষককে ৮ হাজার ৪৮৫ কেজি বীজ, ৩৪ হাজার ৮০০ কেজি ডিএপি সার ও ২১ হাজার ৭৫০ কেজি এমওপি সার। যার আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩২ লাখ ৯০ হাজার ৩১০ টাকা।
সিংড়া উপজেলায় ২ হাজার ৯২০ জন কৃষকের জন্য ৯ হাজার ৫২৫ কেজি বীজ, ৩৭ হাজার ৬০০ কেজি ডিএপি সার ও ২৮ হাজার ৬০০ কেজি এমওপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার আর্থিক বরাদ্দ ২৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫৮০ টাকা।
গুরুদাসপুর উপজেলায় ১ হাজার ৭৮০ জন কৃষকের জন্য ১০ হাজার ২১৫ কেজি বীজ, ২১ হাজার ৮০০ কেজি ডিএপি সার ও ১৪ হাজার ১৫০ কেজি এমওপি সার। যার আর্থিক বরাদ্দ ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৯১০ টাকা। বড়াইগ্রাম উপজেলায় ২ হাজার ৪২০ জন কৃষকের জন্য ১৬ হাজার ৪৯০ কেজি বীজ, ২৬ হাজার কেজি ডিএপি সার ও ১৫ হাজার ৯৫০ কেজি এমওপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ২২ লাখ ৫ হাজার ৪১০ টাকা।
লালপুর উপজেলা ১ হাজার ৮০০ কৃষকের জন্য ২৪ হাজার ৫৫০ কেজি বীজ, ২৫ হাজার ৪০০ কেজি ডিএপি সার ও ১৭ হাজার ৬৫০ কেজি এমওপি সার। যার আর্থিক বরাদ্দ ২৫ লাখ ৪০ হাজার ৫০ টাকা ও বাগাতিপাড়ায় উপজেলায় ১ হাজার ৮০০ জন কৃষক পাচ্ছেন ১৫ হাজার ৯২০ কেজি বীজ, ১৮ হাজার ৫০০ কেজি ডিএপি সার ও ১২ হাজার ৪০০ কেজি এমওপি সার। এজন্য আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা। এজন্য প্রণোদনা উপকরণের মোট পরিবহন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ১ হাজার ২৫০ টাকা এবং আনুষঙ্গিক ও অপ্রত্যাশিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭৫০ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ ধরা হয়েছে ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
সিংড়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন, নলডাঙ্গা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফৌজিয়া ফেরদৌস ও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে প্রণোদনা ও কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির উপকরণ সহায়তা বাবদ বরাদ্দের বিভাজনকৃত চিঠি তারা পেয়েছেন। ইতোমধ্যে কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তারা বলেন, বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে তালিকা অনুযায়ী কৃষকদের মধ্যে খুব শিগগিরই এসব সহায়তা বিতরণ করা হবে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ সুব্রত কুমার সরকার এসব তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, এবারের তিন দফার বন্যায় সদর, সিংড়া, নলডাঙ্গা ও গুরুদাসপুর উপজেলা মিলে ২৯ হাজার ৯১৩ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজার ৯৬৫ দশমিক ৯ হেক্টর জমিতে মোট উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে ১৫ হাজার ৬৬৬ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন। যার আর্থিক ক্ষতি ৬৪ কোটি ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ টাকা।
ডিডি বলেন, কৃষকদের এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় জেলার ৩৬ হাজার কৃষকের জন্য ৩০ কোটি টাকার কৃষি উপকরণ সহায়তা দিয়েছেন। একই সঙ্গে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় রবি ও খরিপ- ১, মৌসুমের জন্য সার ও সাত প্রকার বীজ বাবদ ১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এতে জেলার সাত উপজেলার ১৬ হাজার ৬০০ জন কৃষক এসব সহায়তা পাবেন ।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে জেলা কৃষি পুনর্বাসন ও প্রণোদনা বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকে উপজেলা পর্যায়ে বিতরনের বিভাজন সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ওই তালিকা অনুযায়ী খুব শিগগিরই এসব সহায়তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
আশা করছি, কৃষকদের সঠিকভাবে এসব সহায়তা দেওয়া হলে এবং এর যথাযথ ব্যবহার হলে বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়া অনেকটাই সম্ভব হবে। এজন্য কৃষি বিভাগ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন বন্যার পানি খুব দ্রুত নেমে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই জমি থেকে পানি সরে যাবে এবং জমি প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে। তাই সময় মত এসব প্রণোদনা উপকরণ বিতরণ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২০
আরএ