পাবনা (ঈশ্বরদী): পরনে তার ছেঁড়া শাড়ি। নিত্য অভাব অনটনে চেহারাটা যেন কঙ্কালসার।
পাবনার ঈশ্বরদী শহরের পিয়ারাখালী মহল্লার পঞ্চাশোর্ধ বিধবা মুন্নি দিনের আলো ফুটতেই বাড়ির সামনে পিঠা বিক্রি করেন। স্বামী মারা যাওয়ার পরই অভাব-অনটনে পড়েছেন তিনি।
এলাকায় তিনি ‘মুন্নার মা’ হিসেবে পরিচিত। তিনি ঈশ্বরদী পৌর এলাকার মৃত জামাল উদ্দিনের সহধর্মিণী।
বুধবার (৪ নভেম্বর) কাকডাকা ভোরে ঈশ্বরদী পৌর এলাকার পিয়ারাখালী মহল্লার গলিতে গিয়ে দেখা যায় তিনি পিঠা তৈরি করে বিক্রি করছেন। এলাকার সববয়সী মানুষ আগ্রহ নিয়ে তার কাছ থেকে পিঠা কিনছেন।
কোনো দিকে যেন খেয়াল নেই তার। একের পর এক পিঠা বানিয়ে যাচ্ছেন। মুন্নির আয়ের উৎস এই ভাপা পিঠা বিক্রি। কিন্তু হতদরিদ্র ওই অসহায় নারীর পাশে এসে দাঁড়ায়নি সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা জনগণের ভোটে নির্বাচিত কোনো জনপ্রতিনিধি বা সুশীল সমাজের কেউ।
প্রতিবেশী আশা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, শীতের আমেজ আসতে শুরু করেছে। সকাল বেলা আশেপাশের ক্রেতারা ‘মুন্নার মায়ের’ দোকানে ভিড় জমান। কেউ কেউ চুলার পাশে বসেই গরম পিঠা খান। আবার কেউ কেউ পিঠা কিনে বাড়িতে নিয়ে যান।
ভাপা পিঠা তৈরি ও বিক্রি করার ফাঁকে হতদরিদ্র মুন্নি বেগম আক্ষেপ করে বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর কার্তিক মাস এলে আমার ছেলে-মেয়ের জন্য শখে বাড়িতে পিঠা বানাতাম। সেই পিঠা তৈরি করে এখন সংসার চালাতে হচ্ছে। এই পিঠা বিক্রি হয় ২০০-৩০০ টাকা। অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেছি। একেকটি ভাপাপিঠা বিক্রি করা হয় ৫ টাকায়। সব খরচ বাদে তার প্রতিদিন আয় হয় ৬০-৭০ টাকা। এতে পরিবারে কিছুটা উপকার হয়।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন দুই-তিন কেজি চাল কিনে প্রথমে ভিজিয়ে রাখেন। তারপরে পাটায় বেটে চাউলের গুড়া করতে হয়। বাজার থেকে গুড় কিনে তা আলাদা করে কাটতে হয়।
মুন্নি বেগম বাংলানিউজকে জানান, ‘মানুষের বাড়িতে কাজে যেতে পারি না। উনি তো (স্বামী মৃত জামাল) ঘরামির কাজ করতো। উনি অসুস্থ ছিল কয়েক বছর। লিভারের চিকিৎসার জন্য ৬০-৭০ হাজার টাকা শেষ। সহায় সম্বল বলতে কিছুই নাই আর। আমার চার ছেলে ও তিন মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেরা রিকশা চালিয়ে যা আয় করে, তাদের সংসারে অভাব। তাদের আয় ইনকাম বেশি হলে তো আমাকে দেখবে!’
আক্ষেপ করে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সামান্য পুঁজি দিয়ে বাড়ির সামনে বসে যেটুকু বিক্রি হয়, এটুকু দিয়ে আপাতত চলছি। আমার মাথা গোঁজার ঠাঁইও নাই, মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকি। সরকারি এতো সহযোগিতা আসে। মেম্বর চেয়ারম্যানরা দেখেও যেন দেখে না। শুধু ভোটের সময় এলে কদর বাড়ে। সরকারি সহযোগিতা আমাদের মেলে না। বিধবা ভাতা পেলেও একটা গতি হয় বলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
মুন্নির বিষয়ে ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। সরকারি কোনো বরাদ্দ আসা মাত্রই ওই এলাকার কাউন্সিলরের সঙ্গে আলাপ করে সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২০
এমআরএ