সিলেট: দীর্ঘদিন ধরে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এলাকায় চলছে ভাঙা গড়ার খেলা। পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে আটকে আছে অনেক কাজ।
যেখানে অর্থাভাবে ভাঙা রাস্তাগুলোর উন্নয়ন কাজ বন্ধ রেখেছে সিসিক। সেখানে ব্যক্তিমালিকানা নালিশা ভূমিতে সরকারি টাকায় উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। ঘটনাটি জানাজানির পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এ নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে অভিযোগ করেছেন ভূমির মালিক এইচ ইউ ফারুক ইবনে আম্বিয়া। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান প্রকৌশলীকে প্রতিবেদন দিতে নিদের্শ দিলে সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ রেখে ফের নালিশা ভূমিতে উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যান সিসিকের প্রকৌশলী ও ঠিকাদার।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মিউনিসিপ্যালিটি মৌর্জার ৪৯১৬ দাগের ১২ ভূমি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা জজ ৫ম আদালতে মামলা (অর্পিত মামলা নম্বর- ২৬৭/’১৬ ও ৭৬/’১৬) বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় একটি পক্ষ কৌশলে ডাক্তার গলি নাম দিয়ে দখলের অপচেষ্টার অংশ হিসেবে সিটি করপোরেশনকে দিয়ে নালিশা ভূমিতে উন্নয়ন কাজ করাচ্ছে। অভিযোগকারীর স্থাপনা ও সীমানা প্রাচীরের একাংশ ভেঙে নালিশা ভূমিতে আরসিসি ড্রেন নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের চৌহাট্টা থেকে শাহজালাল (র.) মাজার গেইট পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৭২ লাখ টাকায় রাস্তার কাজের টেন্ডার করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এই কাজটি বাগিয়ে নেন যুবলীগ নেতা মুশফিক জায়গিরদারের মালিকানা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তিনি কাজটি করালেও মধ্যবর্তীস্থানে ব্যক্তিমালিকানা ১২ শতক জায়গায় (নালিশা ভূমি) সরকারি টাকায় আরসিসি ডালাই ড্রেন নির্মাণ করে দিচ্ছেন। কিন্তু জায়গাটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান জেনেও সংশ্লিষ্টরা অন্যকে দখল পাইয়ে দিতে টেন্ডার বহির্ভূতভাবে উন্নয়ন কাজটি করে দিচ্ছেন। বিষয়টি জানাজানির পরে পরস্পরকে দোষারোপ ও দায় চাপাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঠিকাদার মুশফিক জায়গিরদার বাংলানিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশন আমাদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়ায় আমরা কাজ করছি। সিসিক যেখানে দেখিয়ে দেবে, সেখানেই আমরা কাজ করবো। নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে ভূমিটি টেন্ডারের বাইরে হলেও নালিশা হিসেবে জানতেন না। জানার পর তাৎক্ষনিক কাজ বন্ধ রেখেছেন তিনি।
ওই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী জাবেদ আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, উন্নয়নকাজ করা জায়গাটি সিসিকের অলস টাকায় (রেস্ট মানি) দিয়ে করা হচ্ছে। কিন্তু এটা নালিশা ভূমি জানতাম না। স্থানীয় কাউন্সিলরের অনুরোধে ব্যক্তিমালিকানা ওই স্থানে উন্নয়ন কাজ করে দিচ্ছে সিসিক। প্রায় ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্নের পর এটা নালিশা ভূমি জানতে পেরেছি। তবে এটা উদ্দেশ্যহীন নয়।
কাজ বন্ধে মেয়রের কাছে অভিযোগ দেওয়ার বিষযে তিনি বলেন, এক পর্যায়ে কাজ স্থগিত রাখতে বলা হলেও পরে অপরপক্ষ মেয়রকে বলে আবারো কাজ শুরু করিয়েছেন। অবশ্য এ বিষয়ে নিউজ না করারও অনুরোধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী ভূমির মালিক এইচ ইউ ফারুক ইবনে আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, নালিশা ভূমিতে একটি পক্ষকে বৈধতা দিতে বিনা টেন্ডারে সরকারি টাকায় উন্নয়ন কাজ করে দিচ্ছে সিসিক। এ বিষয়ে তিনি মেয়র বরাবরে অভিযোগ দিলে কাজ বন্ধ রেখে প্রধান প্রকৌশলীকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সাময়িক কাজ বন্ধ হলেও পরে অজ্ঞাত কারণে আবার কাজ শুরু করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলাম। যে কারণে প্রথম অবস্থায় অভিযোগ দিতে পারিনি। এ বিষয়ে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন এটা আরেকজনের রাস্তা! প্রকৌশলী অন্যের হয়ে কথা বললেও নালিশা ভূমিতে বিনা টেন্ডারে কাজ করানোর বিষয়টি বলতেই তিনি সুর নরম করেন। মূলত আরেকটি পক্ষকে রাস্তা পাইয়ে দিতে সিসিক অবৈধ পন্থায় এই উন্নয়ন কাজ করাচ্ছে, দাবি করেন তিনি। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি আদালতের স্মরণাপন্ন হবেন।
এ বিষয়ে সিসিকের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাশেদ আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, কাজটি করার জন্য মেয়র নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, কোনো সমস্যা থাকলে প্রয়োজনে আবার ভেঙে ফেলা হবে। এটা তিনি প্রকৌশলীকেও বলে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২০
এনইউ/এমআরএ