ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর হাত ধরে দেশে 'অভিজাত মাদক'

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২০
স্বর্ণ ব্যবসায়ীর হাত ধরে দেশে 'অভিজাত মাদক'

ঢাকা: রাজধানীর গেন্ডারিয়া এলাকার বাসিন্দা চন্দন রায় পেশায় একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তবে এর পাশাপাশি মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করে দেশে 'অভিজাতদের মাদক' আইসের বাজার তৈরির চেষ্টা করছিলেন তিনি।

দেশে নতুন পরিচিত এ মাদকদ্রব্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মাত্র ১০ গ্রাম আইসের দাম প্রায় লাখ টাকা। প্রতিবার দুই-তিনটি কণার সমপরিমাণ মাদক সেবন করতে খরচ হয় অন্তত প্রায় ১২ হাজার টাকা। এ কারণে এটিকে অভিজাতদের মাদক বলছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বুধবার (৪ নভেম্বর) দিনগত রাতে রাজধানীর গেন্ডারিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে চন্দন রায়কে (২৭) আটক করে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) রমনা বিভাগ।

পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর গুলশান, বনানী ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬০০ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

আটক বাকি পাঁচজন হলেন-সিরাজ (৫২), অভি (৪৮), জুয়েল (৫০), রুবায়েত (৩০) ও ক্যানি (৩৬)। তারা নতুন এ মাদক বিক্রি, সেবন ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িত।

বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, আইস বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একেবারেই নতুন মাদক। যা সেবু, ক্রিস্টাল ম্যাথ, ডি ম্যাথসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। এটি ক্ষুদ্র দানাদার জাতীয় মাদক যা ক্রিস্টাল আকারে দেশে আনা হয়। আইসের কেমিক্যাল নাম মেথান ফিটামিন, যার উৎপত্তিস্থল অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন।

নতুন এ মাদক সেবনে ইয়াবার চেয়েও ৫০-১০০ গুণ বেশি মারাত্মক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এটি মূলত স্নায়ু উত্তেজক মাদক, যা সেবনের ফলে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হরমোনের উত্তেজনা এক হাজার গুণ বেড়ে যায়। এর ফলে ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হওয়ার শঙ্কা থাকে, এটির তীব্র রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ধীরে ধীরে দাঁতও ক্ষয়ে যায়। এছাড়া, এটি সেবনে স্থায়ী হ্যালুসিনেশন সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশে কাঁচের পাইপ দিয়ে তৈরি বিশেষ পাত্র 'বং' দিয়ে ধূমপান আকারে আইস ব্যবহারের বিষয়টি দেখা গেছে।  

এ চক্রের মূলহোতা চন্দন রায় আইন-শঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছেন, তার প্রবাসী আত্মীয় শংকর বিশ্বাসের মাধ্যমে মালয়েশিয়া থেকে ব্যাগেজে করে তিনি বিমানে দেশে আনতেন আইস। আইসের মূল বাজার মূলত সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণি।  

মাত্র দুই-তিনটি কণার মাধ্যমে একবার এ মাদক সেবন করতে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়, তাই নিন্ম বা মধ্যবিত্তদের পক্ষে এটি গ্রহন করা সম্ভব নয়। উচ্চবিত্তদের বিভিন্ন পার্টি বা উচ্চবিত্ত সন্তানদের টার্গেট করে আইসের বাজার সৃষ্টির চেষ্টা করছিল চক্রটি।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, চন্দন রায় পেশায় একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তবে তিনি নতুন এ মাদক আমদানি করে অভিজাত শ্রেণির মধ্যে পরিচিত করছিলেন। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি, মাদকের উৎস, আনার প্রক্রিয়া, অর্থায়ন এবং দেশের অন্যান্য চক্রের বিষয়গুলো তদন্তে উঠে আসবে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী চন্দন রায়ের বিষয়েও তদন্ত চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২০
পিএম/এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।