ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চীনে ১৭ পণ্য উৎপাদনে শ্রম মানদণ্ড লঙ্ঘিত হচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্র

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২০
চীনে ১৭ পণ্য উৎপাদনে শ্রম মানদণ্ড লঙ্ঘিত হচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্র ...

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিদপ্তর চীনে উৎপাদিত ১৭টি পণ্যের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যা জোরপূর্বক শ্রম বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করেছে। এ তালিকায় ২০২০ সালে নতুন পাঁচটি পণ্য যুক্ত হয়েছে- যার মধ্যে রয়েছে দস্তানা (গ্লাভস), কেশসজ্জা পণ্য, টেক্সটাইল, সুতা ও টমেটোজাত পণ্য।

এর সবগুলোই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জাতিগত ও মুসলমান সংখ্যালঘুদের ওপর চাপানো জোরপূর্বক শ্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত।

বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এ তথ্য জানায়।

দূতাবাস থেকে বলা হয়, জোরপূর্বক শ্রমে উৎপাদিত পণ্যের এই তালিকা প্রকাশের বিষয়টি চীনের জিনজিয়াংয়ের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে জোরপূর্বক শ্রম নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। এ অঞ্চলে ১০ লাখের বেশি উইগুর ও অন্যান্য জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। চীনে কমপক্ষে ১ লাখ থেকে শুরু করে সম্ভাব্য লাখ লাখ উইগুর ও অন্যান্য জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকের পর থেকে জোরপূর্বক শ্রম পরিবেশে কাজ করছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

সেক্রেটারি অব লেবার ইউজিন স্কালিয়া বলেন, জোরপূর্বক শ্রম ও নির্যাতনমূলক শিশুশ্রম অমানবিক যা বহু জীবন ও পরিবারকে ধ্বংস করছে। আজকের এই তালিকার মাধ্যমে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন কর্তৃক এসব শোষণমূলক চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার মতো উদ্বেগজনক ভূমিকা ফুটে উঠেছে।

এই তালিকাটি দুটি প্রধান প্রতিবেদন ও দুটি স্মার্টফোন অ্যাপের আপডেট প্রকাশের অংশ, যা বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম হ্রাসের পথে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সেগুলো মোকাবিলার কার্যকর কৌশলের প্রতি আলোকপাত করেছে।

২০০৫ সালের ‘পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সুরক্ষা পুনঃঅনুমোদন আইন’ দ্বারা স্বীকৃত শিশুশ্রম বা জোরপূর্বক শ্রম দ্বারা উৎপাদিত পণ্যতালিকার নবম সংস্করণে নতুন দুটি দেশ (ভেনেজুয়েলা ও জিম্বাবুয়ে), একটি নতুন ক্ষেত্র (তাইওয়ান) এবং ছয়টি নতুন পণ্য (দস্তানা, রাবারের দস্তানা, কেশসজ্জা পণ্য, পোম ও স্টোন ফল, বেলেপাথর ও টমেটোজাত পণ্য) যোগ করা হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট মনে করছে- এই পণ্যগুলো শিশুশ্রম বা জোরপূর্বক শ্রমে তৈরি- যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করে। এই সংস্করণে নামিবিয়ার গবাদি পশুকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে জোরপূর্বক বা শিশুশ্রমে শর্তবদ্ধ ভাবে বাধ্য করে উৎপাদিত পণ্যের তালিকায় আরেকটি পণ্য (কম্বোডিয়ার ইট) সংযোজনের জন্য প্রাথমিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে একটি ফেডারেল রেজিস্টার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।   

নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রমের ফলাফল-এর ১৯তম বার্ষিক সংস্করণে বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রমের অবস্থা বিষয়ে সবচেয়ে ব্যাপক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। এতে শিশুশ্রম মোকাবিলায় ১৩১টি রাষ্ট্র ও ভূখণ্ডের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং এ ধরনের প্রচেষ্টার অগ্রগতি যাচাইয়ে কঠোর মানদণ্ড প্রয়োগ করা হয়েছে। এ বছর আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, গুয়াতেমালা, নামিবিয়া, প্যারাগুয়ে ও পেরু – এই আটটি রাষ্ট্র ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ সাধন করেছে মর্মে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন পেয়েছে। প্রতিবেদনের ব্যাপ্তিকালে এই দেশগুলো সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে অর্থবহ প্রচেষ্টা নিয়েছে। ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে আইন ও বিধিমালা, আইনপ্রয়োগ, সমন্বয়, নীতিমালা ও সামাজিক কার্যক্রম- যার মধ্যে ২০১৮ সালে সুপারিশ করা পদক্ষেপগুলোও থাকতে পারে।

এ বছরের প্রতিবেদনে ২ হাজারেরও বেশি কর্মকাণ্ডের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর ৬০ ভাগের বেশি পদক্ষেপই আইন শক্তিশালী করা বা এ ধরনের আইনের প্রয়োগ উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সম্পর্কিত- অর্থাৎ এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান ব্যাপক ঘাটতিগুলোই উঠে এসেছে।

নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রমের ফলাফল বিষয়ক এ বছরের প্রতিবেদনের অনন্য সাধারণ অর্জন হলো- দেশগুলোর তালিকায় প্রথমবারের মতো মেক্সিকোর অন্তর্ভুক্তি। মেক্সিকোর অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গভীরতর ও অধিক শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্কই প্রকাশ পেয়েছে- বিশেষত এবছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা’র মধ্যে কার্যকর হওয়া নতুন চুক্তি বিবেচনায়। আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা হিসেবে এ বিভাগের আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক ব্যুরো এই চুক্তির শর্তাবলী প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সাম্প্রতিক হিসাবে দেখা গেছে , সারা বিশ্বে এখনো ১৫২ মিলিয়নেরও বেশি শিশু শ্রমিক রয়েছে অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে একজন শিশু শ্রমিক। এর বাইরে ২৫ মিলিয়ন জোরপূর্বক নিয়োজিত শিশুশ্রমিক রয়েছে। শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম ঘটছে এমন শিল্পগুলোকে সুনির্দিষ্ট করার মাধ্যমে এই প্রতিবেদনগুলো সরকারগুলোকে যথাযথ নীতি প্রণয়নের জন্য, দাতাগোষ্ঠীকে সর্বোচ্চ চাহিদার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিধিবদ্ধ যাচাই-বাছাই ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ব্যবহারপূর্বক সম্পদ বরাদ্দে সহায়তার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়।

সারা বিশ্বের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম বন্ধে নিজেদের ভূমিকা পালনে সহায়তার লক্ষ্যে এই বিভাগ কমপ্লাই চেইন স্মার্টফোন অ্যাপ-এর একটি উন্নত সংস্করণ প্রকাশ করছে। সেরা চর্চাগুলোর হালনাগাদ দৃষ্টান্তগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এটি ফরাসি ও স্প্যানিশ উভয় ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে। সহজে ব্যবহার্য এই অ্যাপটি আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড দুই মাধ্যম থেকেই ডাউনলোড করা যাবে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার মধ্যে শক্তিশালী সামাজিক পরিপালন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ও উন্নীত করার পন্থা বিষয়ে পরিষ্কার ও বিস্তারিত ধারণা পাবে। এটি সরবরাহকারীসহ তাদের পণ্য উৎপাদনে শ্রম নির্যাতন সনাক্তকরণ, সংশোধন ও প্রতিরোধে সহায়তা করবে।

এই বিভাগ থেকে সোয়েট অ্যান্ড টয়েল অ্যাপের একটি হালনাগাদকৃত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে যেখানে শিশুশ্রম বা জোরপূর্বক শ্রম দ্বারা উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। শিশুশ্রম মোকাবিলায় সরকারের প্রচেষ্টার সর্বশেষ ফলাফলও আছে এতে। এর ফলে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পৃষ্ঠার এই তথ্যকে বহনযোগ্য, অনুসন্ধানযোগ্য ও সহজলভ্য করা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২০
টিআর/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।