ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এলজিইডির ৬৯টি শস্যগুদামের মালিকানা পেল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২০
এলজিইডির ৬৯টি শস্যগুদামের মালিকানা পেল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর

ঢাকা: স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মালিকানাধীন ৬৯টি শস্যগুদামের মালিকানা পেয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। একইসঙ্গে ২০২২ সালের মধ্যে দেশের আটটি বিভাগের ৪৭টি জেলায় ১০৬টি উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

এ লক্ষ্যে এলজিইডির মালিকানাধীন ৬৯টি শস্যগুদাম কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে হস্তান্তরের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষে সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সচিব মেসবাহুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আসাদুল্লাহ, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ প্রমুখ।

এসময় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শুধু ৬৯টি নয়, সারাদেশেই আমাদের খাদ্য গুদাম করতে হবে। আমরা দাবি করছি আমরা কৃষিবান্ধব; সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। সবাই সম্রাজ্য বাড়াতে চায়। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ খুব সহজেই ৬৯টি গুদাম হস্তান্তর করছেন এবং কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার জন্য জমি দিচ্ছেন। আমি তাদের ধন্যবাদ দিচ্ছি। এটা দিয়ে আমাদের শুরু। আমরা এই প্রকল্পকে আরও সম্প্রসারিত করবো।

মজুদ করতে না পারায় কৃষককে কম দামে ধান বিক্রি করে দিতে হয় জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ১৯৭৮ সালে চিন্তা করেছিলাম ধান যেন কৃষককে সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করতে না হয়, কিছুদিন যেন ধরে রাখতে পারে। তা না হলে তার সংসার চলবে কী করে। সেজন্য ৮০ ভাগ ঋণ দিয়ে দৈনন্দিন খরচ মেটানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। ধানের দাম যখন বাড়বে তখন যাতে বিক্রি করে কৃষক বেশি মূল্য পায়। প্রকল্পটি অনেক আগেই বিস্তৃত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেটি হয়নি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এক সময় খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল। এখন আর আমাদের খাদ্য আমদানি করতে হয় না। শুধু দানাদার খাদ্য নয়, মৎস্য, পশু উৎপাদনসহ নানাবিধ ফসলের অর্জন দেখে সারাবিশ্ব আজ আমাদের দেখে হিংসা করে। এরকম একটি সময়ে কৃষিকে আধুনিকায়ন করা ও আরো বেশি গুণগত পরিবর্তন আনাসহ উপজেলা পর্যায়ে কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নেওয়ায় কৃষিমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।  

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক এলজিইডির ৬৯টি খাদ্য গুদামের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য প্রেরণ করা হলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৬৯টি খাদ্য গুদাম কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে হস্তান্তর করার সম্মতি দেওয়া হয়। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর শস্যগুদাম ঋণ কার্যক্রমের আওতায় এ কার্যক্রম পরিচালিত করে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূমিহীন, দুস্থ, প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষক ভরা মৌসুমে তাদের উৎপাদিত শস্য ৮১টি গুদামে (এলজিইডির মালিকানাধীন ৬৯টি ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ১২টি) রাখে এবং গুদামে সংরক্ষিত শস্যের বিপরীতে ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে খাদ্য শস্যের দাম বৃদ্ধি পেলে তা বিক্রি করে ব্যাংক ঋণ পরিশাধে করে।

এছাড়া দেশের আটটি বিভাগের ৪৭টি জেলায় ১০৬টি উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে হাতে-কলমে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কিত নতুন ফসল উৎপাদনের কৌশল, পরিচর্যা, রোগ ও পোকার আক্রমণের ধরণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও রোগবালাই দমনের কার্যকরী ব্যবস্থাপনার উপর কৃষক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রকল্পভুক্ত উপজেলার কৃষকদের কৃষি সম্পর্কিত জ্ঞান ও কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে ও কৃষকরা কম খরচে অধিক ফলন পাচ্ছে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে কৃষক প্রশিক্ষণ করা সহজ হবে। ফলে দ্রুত সময়ে মাঠ পর্যায়ে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ হবে।

উল্লেখ্য, রংপুর, শেরপুর, মাগুরা ও বরিশাল অঞ্চলে ২৭টি জেলার ৫৬টি উপজেলায় ৮১টি গুদাম পরিচালিত হচ্ছে। ৮১টি গুদামের মধ্যে ১২টি গুদাম কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নিজস্ব এবং অবশিষ্ট ৬৯টি গুদাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছ থেকে বার্ষিক ভাড়ার ভিত্তিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি গুদামের গড় ধারণ ক্ষমতা ২৫০ মেট্রিক টন। বছরে গড়ে চার হাজার ৩৬৫ জন কৃষক পরিবারকে চার হাজার ৯২১ মেট্রিকটন শস্য জমার বিপরীতে ৬০৪ দশমিক ৯১ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২০
জিসিজি/এইচএমএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।