ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভক্ত সমাবেশ ছাড়াই রাজশাহীতে শেষ হলো খেতুরীধামের মহোৎসব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২০
ভক্ত সমাবেশ ছাড়াই রাজশাহীতে শেষ হলো খেতুরীধামের মহোৎসব খেতুরীধাম মন্দির

রাজশাহী: বিশ্বজুড়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মোট ছয়টি ধাম রয়েছে। এরমধ্যে পাঁচটিই ভারতবর্ষে।

আর একটি বাংলাদেশে। সেটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খেতুর গ্রামে। যুগ যুগ ধরে দুর্গাপূজার পর বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরা অহিংসার মহান সাধক ঠাকুর নরোত্তম দাসের কৃপা লাভের আশায় খেতুরীধামে বছরে একবার মিলিত হয়ে থাকেন।  

তবে করোনা মহামারির কারণে এ বছর ভক্ত সমাবেশ ছাড়াই শেষ হলো মহোৎসব। প্রায় পাঁচ শতাব্দির ইতিহাসে এ প্রথম ভক্তদের সমাবেশ হলো না খেতুরীধামে। শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে উৎসব উদযাপন হয়েছে। শুক্রবার (৬ নভেম্বর) এ উৎসব শেষ হয়।

তিরোভাব তিথি মহোৎসবের সময় খেতুরীধামে নেই ভক্তদের কোলাহল। এ বছর সমাবেশ হবে না তা সংবাদ সম্মেলন করে আগেই জানিয়েছে শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ড। সে সংবাদ সম্মেলন থেকে এ বছর ভক্তদের না আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। তারপরও কেউ কেউ এসেছেন। পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা করে তাদের ফেরত পাঠিয়েছে।  

মন্দিরের সবগুলো ফটক বন্ধ রেখেই হাতে গোনা কিছুসংখ্যক মানুষ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন। তবে শুক্রবার মহোৎসব শেষ হলে মন্দিরের ফটকগুলো খুলে দেওয়া হয়। তখন দূর-দুরান্ত থেকে আসা অনেকেই মন্দিরে পূজা-অর্চনা করেন। তবে তাদের সংখ্যা খুব কমই।

জানা যায়, গত বুধবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে তিরোভাব তিথির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) অরুণোদয় থেকে অষ্ট প্রহরব্যাপী তারক ব্রাহ্মনাম সংকীর্ত্তণ এবং শুক্রবার সকালে দধি মঙ্গল, দ্বি-প্রহরে ভোগ আরতি ও মাহান্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে মহোৎসব শেষ হয়।

খেতুরীধামের ব্যবস্থাপক গোবিন্দ চন্দ্র পাল বলেন, ভক্তদের জন্য আমাদের মন কেঁদেছে। তারপরও এবার তাদের আসতে বারণ করেছি। তিন দিন মন্দিরের ফটক বন্ধ রেখেই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালিত হয়েছে। শুক্রবার অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। তাই দূর-দুরান্ত থেকে অল্প কিছু যেসব ভক্ত চলে এসেছিলেন তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। সামনের বছর আশা করছি করোনার সংকট থাকবে না। তখন আবার সবাই আসতে পারবেন। আবারও বড় উৎসব হবে।

১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে ঠাকুর নরোত্তম দাস তৎকালীন গড়েরহাট পরগণার অন্তর্গত বর্তমান রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা তীরের গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব পার করে ঠাকুর নরোত্তম দাস বৃন্দাবন অভিমুখে যাত্রা করেন। সেখানে নিখিল বৈষ্ণবকুল লোকনাথ গোস্বামীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে দীক্ষা লাভ করেন। পরে তিনি খেতুরে ফিরে আসেন। খেতুর মন্দিরে গড়ে তোলেন স্থাপনা। এরপর তিনিই প্রথম এখানে এ উৎসবের আয়োজন করেন। ভক্তরা দূর-দূরান্ত থেকে তার কাছে এসে দীক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেন।

১৬১১ খ্রিস্টাব্দের কার্তিকী কৃষ্ণা পঞ্চমী তিথিতে ঠাকুর নরোত্তম দাস নিত্তলীলায় প্রবেশের মানসে গঙ্গাস্নানের বাসনা প্রকাশ করেন। শিষ্যরা তাকে গঙ্গাজলে নিয়ে গেলে নিজের দেহকে অর্ধনিমজ্জিত করে প্রিয় শিষ্য গঙ্গানারায়ণ ও রামকৃষ্ণকে আদেশ করেন তার দেহ মার্জন করতে।  

গুরু আজ্ঞায় নরোত্তমের ওই দুই শিষ্য তার দেহ মার্জন করতে থাকলে পুরো দেহ এক সময় সাদা দুধের মতো তরল পদার্থে পরিণত হয়ে গঙ্গাজলে মিলিত হয়ে যায়। এরপর থেকেই দুর্গাপূজার পর বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরা অহিংসার এ মহান সাধকের কৃপা লাভের আশায় খেতুরীধামে বছরে একবার মিলিত হয়ে থাকেন। এটি হয়ে থাকে বাংলাদেশে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। তবে এ প্রথম সেই সমাবেশ হলো না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২০
এসএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।