ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হাজী সেলিমের দখলে থাকা ১৪ বিঘা খাস জমি উদ্ধার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২০
হাজী সেলিমের দখলে থাকা ১৪ বিঘা খাস জমি উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জ: সোনারগাঁওয়ে হাজী সেলিমের টাইগার সিমেন্ট কারখানায় আবারও অভিযান চালিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ অভিযানে ১৪ বিঘা খাস জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে।

 

কারখানাটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনা শিল্পনগরীর ইসলামপুর এলাকায়।  

বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতিকুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধভাবে দখলে রাখা প্রায় ১৪ বিঘা খাস জমি উদ্ধার করেন। পরে প্রশাসন জমি দখলমুক্ত করে সরকারি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়।  

এর আগে গত রোববার (১ নভেম্বর) বিকেলে টাইগার সিমেন্ট ফ্যাক্টরির দখলে থাকা সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসিল্যান্ড আল মামুন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। ওইদিন সময় স্বল্পতার কারণে ও বুলডোজার বিকল হয়ে পড়ায় অভিযান স্থগিত করা হয়। এরপর খাস জায়গা ছেড়ে দিতে তিন দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ে দখল ছেড়ে না দেওয়ায় বৃহস্পতিবার আবারও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।  

এদিকে সরকারি সম্পত্তি দখলের পাশাপাশি হাজি সেলিম ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০ জনের প্রায় পাঁচ বিঘা জমি প্রভাব খাটিয়ে দখলে নেন। এ সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য গত বুধবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী ১০ ব্যক্তি। এছাড়া দেশের প্রভাবশালী শিপইয়ার্ড কোম্পানি আনন্দ শিপয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ কোম্পানিরও ১৪ শতাংশ জমি দখল করে নেন এমপি হাজী সেলিম।  

ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ভূক্তভোগী আলী ইসলাম জানান, এমপি হাজী সেলিম প্রভাব খাটিয়ে তার দুই বিঘা সম্পত্তি দখলে নিয়ে নেন। এ বিষয়ে একাধিকবার তার মালিকানাধীন টাইগার সিমেন্ট কারখানায় গেলেও আমার জমি ক্রয় করে নেননি হাজী সেলিম। আমি তার বিরুদ্ধে দু’টি মামলাও দায়ের করেছি। এছাড়াও আরও নয় জনের জমি দখল করেন হাজি সেলিম।

এদিকে ইসলামপুর এলাকায় প্রভাবশালী কামাল হোসেন ওরফে নেতা কামালের দখলে থাকা প্রায় তিন বিঘা খাস জমি উদ্ধার তৎপরতা চালায় প্রশাসন। ইসলামপুর গুচ্ছগ্রাম এলাকায় কামাল হোসেনের অবৈধভাবে গড়ে তোলা মার্কেট আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই জমিতেও জেলা প্রশাসকের পক্ষে সরকারি সম্পত্তি উল্লেখ করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। এ সময় অস্থায়ী আওয়ামী লীগ কার্যালয় লেখা সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড অপসারণ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।  

অভিযান পরিচালনার সময় উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আতাউর রহমান, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা  মো. জালাল উদ্দিন ও ভূমি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যরা।

ইউএনও আতিকুল ইসলাম জানান, সরকারি ১৪ বিঘা খাস জমি দখলমুক্ত করতে বেধে দেওয়া তিনদিন সময় শেষ হওয়ার পর পুনরায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। হাজী সেলিমের দখলে থাকা প্রায় ১৪ বিঘা জমি থেকে একটি টিন সেড গোডাউন ও পাথরের স্তূপ অপসারণ করে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।  

তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চিহ্নিত করা ওই সরকারি সম্পত্তিতে টিনের দেয়াল স্থাপন করা হবে। এছাড়াও ওই সম্পত্তি সবসময় দখলমুক্ত রাখতে স্থানীয় পিরোজপুর ভূমি কার্যালয়ের মাধ্যমে তদারকি করা হবে।

সম্প্রতি ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম নৌ-বাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে একে-একে জমি দখলের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে থাকে। এরপর থেকেই হাজী সেলিমের দখলে থাকা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি উদ্ধার তৎপরতা চালায় প্রশাসন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২০
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।