ঢাকা: যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম মুজিববর্ষ উপলক্ষে কমিউনিটি সেবা নিয়ে আয়োজিত এক বিশেষ সংলাপে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণীত জনগণের সেবক হিসেবে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সর্বোচ্চ মানের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তার ও হাই কমিশনের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানে কনস্যুলার, বাণিজ্যিক, কল্যাণ ও কোভিড দুর্যোগকালীন মানবিক সেবাসহ বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে হাইকমিশনার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতাদের অবহিত করেন এবং তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
শুক্রবার (৬ নভেম্বর) লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
হাইকমিশনে আয়োজিত এই ভার্চ্যুয়াল সংলাপে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ তরুণ প্রজন্মের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী অংশ নেন। তারা গত দুই বছরে লন্ডন মিশনের কনস্যুলার সেবাসহ অন্যান্য সেবার মানের দৃশ্যমান উন্নতির প্রশংসা করে বলেন, হাইকমিশন বিগত দুই বছরে অনেক বেশি সক্রিয় ও জনমুখী হয়েছে, কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ অনেক বেড়েছে এবং দূরত্ব কমেছে।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে শহীদ জাতীয় চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
গত দুই বছরে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে হাইকমিশনার বলেন, লন্ডন হাইকমিশনে ‘সার্ভিস উইথ স্মাইল অ্যান্ড ডিগনিটি’ কর্মসংস্কৃতি চালু করেছি। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে হাইকমিশন ৩৫ শতাংশের বেশি পাসপোর্ট এবং ১০ শতাংশের বেশি এনভিআর ও জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করেছে। একই সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছে। চলতি বছর মার্চ মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত হাইকমিশন লকডাউনের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাসপোর্ট, এনভিআর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছে।
‘যুক্তরাজ্যে লকডাউন চলার সময়ও হাইকমিশন প্রতিটি উইং খোলা রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের সেবা চালু রেখেছে। গত সাত মাসে ২৪/৭ দুটি মোবাইল হেলপলাইনে একুশ হাজার টেলিফোন কল রিসিভ করা হয়েছে। কোভিডের আগে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে ১৪ বার আঞ্চলিক কনস্যুলার সার্জারির মাধ্যমে হাইকমিশন তার সেবা প্রবাসীদের দোরগড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। ২০১৮ সালে এই ধরনের আঞ্চলিক সেবা দেওয়ার সংখ্যা ছিল মাত্র চারটি। ’
হাইকমিশনার জানান, তার বিশেষ উদ্যোগে হাইকমিশনে একটি ডেডিকেটেড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ডেস্ক খোলা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রবাসী দ্বৈত নাগরিকদের বাংলাদেশে পারিবারিক সমস্যা ও সম্পত্তি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সহায়তাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে নাম অর্ন্তভুক্তি ও মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। গত দুই বছরে এ ধরনের দুইশর বেশি সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাইকমিশন বাংলাদেশে ৭৫০টি অফিসে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় চিঠি পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, দ্রুত সেবা দেওয়ার জন্য কোভিডের আগে হাইকমিশনের কনস্যুলার উইংয়ে ইলেক্ট্রনিক টোকেন পদ্ধতি ও একাধিক সার্ভিস ডেস্ক চালুসহ অভ্যর্থনা কক্ষে ফটোকপি, কম্পিউটার ও পাসপোর্ট সাইজ ছবি তোলার মেশিন বসানো হয়েছিল। কোভিডের কারণে সেবা গ্রহিতারা এখন এসব সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না। তবে বয়স্ক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিশেষ সার্ভিস দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। যারা হাইকমিশনে আসতে পারছেন না এমন অসুস্থ ও অক্ষম ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেবা দিচ্ছেন।
হাইকমিশনার বিশেষভাবে উল্লেখ করেন বর্তমানে কনস্যুলার সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের ফি ক্রেডিট কার্ড, ডেভিড কার্ড ও পোস্টাল অর্ডারে নেওয়া হচ্ছে বিধায় হাইকমিশনে নগদ লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। গত দুই বছরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়ায় হাইকমিশনের সেবার গুগল রেটিং আগের ১.৮ থেকে বর্তমানে ৩.৬-এ উন্নীত হয়েছে।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, লন্ডন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টাডি সার্কেলের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, কাউন্সিলর পারভেজ আহম্মদ, গ্রেটার সিলেট ডেভেলাপমেন্ট ও ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের সভাপতি ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুনিম, কমনওয়েল্থ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. এমদাদুল হক চৌধুরী, ইউকে বিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট নাজমুল ইসলাম নুরু, ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মাহতাব মিয়া, চেতনায় বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মিনা বড়ুয়া, আয়ারল্যান্ডের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খন্দকার রিয়াজ উদ্দিন, সাংবাদিক তানভীর আহমেদ, তরুণ উদ্যোক্তা হারুন দানিশ ও নিয়মিত সেবা নেওয়া তোফায়েল খসরু মিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২০
টিআর/এইচএডি