ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সক্রিয় কিশোর গ্রুপ, বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২০
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সক্রিয় কিশোর গ্রুপ, বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা প্রতীকী ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: দেশের উত্তর-পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্রমেই বাড়ছে কিশোর গ্রুপের সংখ্যা। মাদকের সহজলভ্যতা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে দিন দিন এসব গ্রুপের দৌরাত্ম্য বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উঠতি বয়সী ছেলেরা মাদকাসক্তির এক পর্যায়ে নেশার টাকা জোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে। একইসঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

শুধু তাই নয়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এক গ্রুপের সদস্যরা অন্য গ্রুপের সদস্যদের ওপর হামলা করতেও দ্বিধা করছে না। পারিবারিক শিক্ষা, করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে কিশোররা এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলায় মোট জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ কিশোর। এদের মধ্যে তিন শতাংশ কিশোরের বিরুদ্ধে মাদক সেবন, অস্ত্র ও মাদক পাচারের তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকার মামলা আছে। এসব কিশোর গ্যাংগুলোর মধ্যে কিছু জেলা সদরে এবং সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর উপজেলায় সক্রিয়।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘গ্যাং কালচার’ আলোচনায় আসার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপ গড়ে উঠে। বর্তমানে ৩০ থেকে ৩২টি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য সক্রিয় রয়েছে এই জেলায়। করোনাকালে তারা মারাপিট, মাদক, অস্ত্র, জাল রুপি ও চোরাচালানসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ পরিচালনা করছে।

জেলা সদরের মসজিদপাড়া, নাখেরাজপাড়া, শান্তি মোড়, ফকিরপাড়া, মাঝপাড়া, হরতিকী তলা, জান্নাতপাড়া, পিটিআই বস্তি, আলীনগর, কোলনি এবং হুজরাপুরে কিছু কিশোর গ্যাং রয়েছে বলে জানা গেছে। এরা অধিকাংশই মাদকাশক্ত এবং ছিনতাই ও চুরির সঙ্গে জড়িত।

করোনার আগে এসব গ্যাং বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সামনে ইভটিজিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। ইভটিজিং স্পটগুলো চায়ের দোকান হওয়ায় তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) টিএম মুজাহিদুল ইসলাম সেগুলো বন্ধ করে দেন। পরে ওইসব দোকান মালিকরা ইভটিজারদের আশ্রয় না দেওয়া শর্তে মুচলেকা দিলে দোকান খোলার অনুমতি পান। বর্তমানে ইভটিজিং ছাড়াও বেড়েছে অন্য তৎপরতা। তবে পুলিশ বলছে অন্য কথা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম খাঁন বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় কোনো কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব নেই। যারা মাদকসহ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত তারা কোনো গ্যাংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে। তাই যারা বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়াচ্ছে, তাদেরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

আর জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সভাপতি অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম বাংলানিউজকে বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, মাদক, অবাধে ইন্টারনেট ব্যবহারসহ নানা কারণে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোররা। এছাড়াও পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা না থাকায় কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এমনকি শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার প্রবণতা কমে গেছে। তাই এ ধরনের অপরাধ বাড়ছে। ধর্মীয়, নৈতিক শিক্ষা বৃদ্ধি ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নজরদারি বাড়ালে এ ধরনের অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২০
এইচএমএস/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।