পাবনা: পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুরে কৃষি জমি দখল নিতে প্রান্তিক চাষিদের ফসল নষ্ট করে দিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আইনী লড়াইয়ে হারের পরেও এসব জমি কেনা সম্পত্তি দাবি করে দখলে নেওয়ার পায়তারা করছেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।
তবে এ ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা।
পাবনা সদরের খুব কাছের ইউনিয়ন হেমায়েতপুর। এই ইউনিয়নের চরভবানীপুর গ্রামের পদ্মানদী সংলগ্ন নিজেদের জমিতে চলতি বছরের বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে কলার বাগান ও খেসারি বুনেছিলেন ভুক্তভোগী চাষিরা। কিন্তু ফসল ঘরে তোলার আগেই স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে ওই জমি দখল নেওয়ার জন্য নষ্ট করা হয়েছে ১৮ বিঘা জমির ফসল। গত মঙ্গলবার ১ নভেম্বর দুপুরে প্রকাশ্যে স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে নষ্ট করে দেয় ক্ষেতর সমস্ত ফসল। ফলন্ত জমির ফসল হারিয়ে এখন দিশেহারা চাষিরা।
ভুক্তভোগী চাষিদের অভিযোগ, ১৯৪৮ সালে সরকারি নিলামে ওঠা সম্পত্তি ক্রয়সূত্রে এসব জমির মালিক হন তাদের পূর্বপুরুষ। সর্বশেষ হালনাগাদ খাজনাও দিয়েছেন তারা। এরপরেও, গত কয়েক বছর ধরে ক্রয়কৃত সম্পত্তি দাবি করে জমির দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম সম্পাদক আব্দুল বারী বাকী ও হেমায়েতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন। জমির বৈধ কাগজ না থাকায় তাদের অনুসারী স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বারবার ফসল নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে তাদের। এবার দিয়ে তিনতিন বার তাদের জমির ফসল নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের মাধ্যমে আরো জানা যায়, এই প্রভাবশালী মহল ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমি দখল করে কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে ইটের ভাটায়। আর এভাবে এই অঞ্চলের কৃষি ফসলের চাষাবাদে দেখা দিয়েছে ব্যাপক বিপর্যয়।
অভিযোগের বিষয়ে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল বারী বাকী বাংলানিউজকে বলেন, ওই জমি আমাদের। দীর্ঘদিন ধরে এই জমি নিয়ে তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। তবে ফসল নষ্টের অভিযোগ অসত্য, চাষিরাই জমির অবৈধ দখলদার। আমাদের কাছ থেকে যারা জমি লিজ নিয়েছে তাদের সঙ্গে ঝামেলা হতে পারে। তবে আমি কারো ক্ষতি করবো এমটা কখনো ভাবিনি। দখল করে জমির বৈধ মালিক হওয়া যায় না। এই জমির বিষয়ে আদালতে শরণাপন্ন হয়েছি আমরা। এখনো কোনো সমাধান হয়নি। তবে ওই জমির ফসল নষ্টের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
পাবনা হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মালিথা বাংলানিউজকে বলেন, ওই জমির মালিক আমি নিজে ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বাকী সাহেব। এই জমির বিষয়ে বেশ কয়েকবার সমাধানের জন্য বৈঠক হয়েছে। তারা জমি পাবে তবে সেটি এই ইউনিয়নের জয়েনপুর মৈজায়। আর তারা দখল করে চাষাবাদ করছে ভবানিপুর মৈজায়। ওরা আমাদের কথা শোনেনা জোর করে প্রতিবছর চাষাবাদ করে। আমরা এর আগে ফসল চাষ করেছিলাম ওরা নষ্ট করে দিয়েছে। তবে এবার কারা কলার বাগান আর খেসারির ক্ষেত নষ্ট করেছে জানি না। লোক মুখে শুনতে পেরেছি। আমার কাছে ওরা আসেনি।
পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ রানা বলেন, পাবনা সদর থানার ওসির মাধ্যমে বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। ক্ষতিগ্রস্ত ওই সব কৃষক পরিবার একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিলো। ঘটনার সত্যাতা পাওয়া গেছে। তবে এ ঘটনার বিষয়ে কারা কারা যুক্ত রয়েছে আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে অতিদ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপের জন্য থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৃষি ফসল নষ্ট করে জমি দখল করার এই কাজের সঙ্গে যারাই যুক্ত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২০
এনটি