চাঁদপুর: চাঁদপুর জেলায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের আস্তানাই হচ্ছে সদর উপজেলায়। ২০১৯ সাল থেকে এদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দেখা দেয়।
এ পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য পারভেজ (১৬) ও দেলোয়ার হোসেন (২১) নামে দুইজন শিক্ষার্থীকে হত্যার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় মামলা পর তাদের ১০ জন সদস্য (২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী) কারাগারে ছিলো। পরবর্তীকালে জামিনে মুক্ত হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে সন্দেহজনক আটক হয় ৭১ জন। তাদের বাবা-মাকে থানায় ডেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখায় পরিস্থিতি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ চলতি মাসের ১০ অক্টোবর চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনের দিন গনি উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের বাইরে একই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মধ্যে দুইজনের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাতে ইয়াছিন মোল্লা (২০) নামে একজন নিহত হন। পরে অভিযুক্ত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য শাহেদ মিজিকে (১৮) পুলিশ আটক করে আদালতে পাঠায়। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে।
বাকি ফরিদগঞ্জ, হাইমচর, কচুয়া, শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলায় থানাগুলোতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সঙ্গে আলাপ করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কোনো মামলা কিংবা অভিযোগের তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদ হোসেন বলেন, নির্দিষ্ট কোনো কিশোর গ্যাং সদস্য এই থানায় নেই। তবে বিভিন্ন ঘটনায় কিশোর অপরাধীদের আটক করা হয়। তবে তারা গ্যাংয়ের সদস্য না।
চাঁদপুর সদর মডেল থানা সূত্র জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর কিশোর গ্যাং সদস্যদের হামলার শিকার হন শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন। ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ১০ কিশোর গ্যাং সদস্যদের হামলায় আহত হন পারভেজ পাপ্পু। পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি তার মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে চলমান।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম উদ্দিন বলেন, সারাদেশে যখন কিশোর গ্যাংদের অপরাধ বেড়ে যায়, তখন চাঁদপুর শহরেও দেখা দেয়। আমরা এসপি মহোদয়ের নির্দেশে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত নিয়মিত পাড়া মহল্লায় অভিযান করে অধিকাংশ সদস্যকে আটক করি। যে কারণে বাকিরাও ভয়ে সংঘবদ্ধ হতে পারেনি। শহরের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকায় তারা সুবিধা করতে পারেনি। জড়ো হলেই তাদের আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ২০১৯ সালে সন্দেহজনক ৭১ জনকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে থানায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের সব তথ্য সংরক্ষিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পুলিশ দিয়ে নয় বরং পরিবারের অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে। পারিবারিক শিক্ষাটাই খুবই জরুরি। সন্তানের খোঁজ খবর যদি বাবা-মা রাখেন তাহলে এদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই সহজ। তবে আটকদের মধ্যে ৭০ শতাংশ স্কুল ও কলেজের ছাত্র। বাকি ৩০ শতাংশ বখাটে ও পড়া লেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মাহবুবুর রহমান বক্তব্য দেননি। তার কার্যালয়ে গেলে তিনি ভাল করে তথ্য জেনে এ বিষয়ে বলবেন বলে জানিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ফোন দেওয়া হলে নির্বাচনের কাজ আছে ব্যস্ত। নির্বাচন শেষ হলে ফোন দেওয়ার জন্য বলেন। পরে তাকে বহুবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২০
এনটি