ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষে ঝুঁকি থাকলেও লাভবান কৃষক

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০২০
গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষে ঝুঁকি থাকলেও লাভবান কৃষক

কুষ্টিয়া: ফুলকপি শীতকালের খুবই জনপ্রিয় একটি সবজি। তবে বর্তমানে কুষ্টিয়ায় প্রায় সারাবছরই এই সবজির চাষ হচ্ছে।

অসময়ে এ সবজি বাজারে পাওয়ায় দামও বেশ ভালো পেয়েছেন কৃষকরা। এছাড়া খুবই অল্প সময়ে এ সবজি চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন মিরপুর উপজেলার প্রায় শতাধিক চাষি।

ফুলকপি মূলত শীতকালীন সবজি হওয়ায় গ্রীষ্মকালে এটি চাষে বেশ ঝুঁকি রয়েছে। তবে গ্রীষ্মকালেও এই সবজির আবাদ করে দাম ভালো পাওয়ায় বেশ খুশি চাষিরা।

গতবছর গ্রীষ্মকালীন এ ফুলকপি চাষ করতে গিয়ে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবারে তা পুষিয়ে বেশ লাভ করছেন বলে জানান তারা।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের আবুরী গ্রাম। বর্তমানে সবজি চাষিদের গ্রাম হিসেবে বেশ পরিচিত। আগাম সবজি চাষ করে এই গ্রামের চিত্রটাই পাল্টে গেছে। মাটির বাড়ি থেকে এখন বেশিরভাগ মানুষের বাড়ি হয়েছে ইটের।

আবুরী এলাকার কৃষক আনারুল ইসলাম। ১০ বছর ধরে তিনি সবজি চাষ করছেন। গতবছর কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রথম গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষ করেন। তবে আবহাওয়ার কারণে পচে যায় ফুলকপি। তবে হতাশ হননি তিনি। এবার বেশ সাফল্য পেয়েছেন।

আনারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি ১০ বছর ধরে বিভিন্ন সবজি চাষ করি। আলু, পটল, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। পাশাপাশি ধানেরও চাষ করি। কৃষক মানুষ যেটাতে লাভ হয় সেটাই করার চেষ্টা করি।

অন্যান্য ফসলের তুলনায় সবজি চাষটা বেশ লাভজনক। গতবছর কৃষি অফিসের পরামর্শে আমি প্রথমবার গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষ করি। তবে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় গতবার অধিকাংশ কপি পচে নষ্ট হয়ে যায়। গতবার দুই বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি করেছিলাম। এতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছিলো। তবে বাজারে দাম ভালো ছিলো। এজন্য আবারো এ বছর গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি করেছি।

তিনি আরো বলেন, এ বছর দুই বিঘা জমিতে লিডার জাতের গ্রীষ্মকালীন আগাম ফুলকপির চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি আমার জমিতে ৪ হাজার করে ফুলকপি গাছ ছিলো। প্রতি বিঘায় প্রায় ১৮-২০ মণ ফলন পেয়েছি। শীতকালীন হলে আরো বেশি হতো। তবে এ বছর কপির যে দাম তাতে গত দশ বছরেও এমন দাম পাইনি। ১০-১৫ টাকা কেজি দরে এর আগে কপি বিক্রি করেছি। আর এ বছর বিক্রি করেছি ৬০-৬২ টাকা দরে। তাও জমি থেকেই নিয়ে যায়।

আনারুল বলেন, ইতোমধ্যে ৭০ হাজার টাকার কপি বিক্রি করেছি। এখনো জমিতে যে কপি আছে ২০ হাজার টাকার উপরে হবে। খুব কম সময়ে এ কপি পরিপূর্ণ হয়। শীতকালের চেয়ে গরমকালের কপিতে ফলন কম হলেও দাম বেশি হওয়ায় লাভও বেশি হয়।

গ্রীষ্মকালে আমি ২ বিঘা জমিতে আগাম ফুলকপি করেছিলাম। যেটা ইতোমধ্যে বিক্রি প্রায় শেষের দিকে। আবার আগাম শীতকালীন কপিও লাগিয়েছি। আবার চারাও দিচ্ছি। অন্য ফসলের তুলনায় এই কপি চাষটা খুবই লাভজনক।

 

একই এলাকার কৃষক জামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ফুলকপি আমরা শীতকালে করতাম। কিন্তু গতবছর থেকে আমরা শীত ও গরম দুই সময়েই এই সবজির চাষ করছি। গরম কালে কপির দাম ভালো পাওয়া যায়, তবে পচে নষ্ট হওয়ার ভয়ও থাকে।

জাত ভেদে ৬০-৭০ দিনে ফসল বিক্রি করা যায়। আমি এ বছর তিনবার কপি চাষ করছি। লিডার জাতের কপি আগাম, সনোবক্স জাতের কপি কদিন পরে উঠবে আর এক্সএল জাতের কপির বীজ ছিটিয়েছি বীজতলায়।

তিনি বলেন, দেড় বিঘা জমিতে আমি ৫০ হাজার টাকার উপরে কপি বিক্রি করেছি। আর এ বছর যে দাম এমন দাম চাষি হয়তো কখনো পায়নি। দাম ভালো হওয়ায় এই এলাকায় অধিকাংশ কৃষক এখন ফুলকপি চাষ করছেন।

শরিফুল ইসলাম নামে অপর এক কৃষক জানান, শীতকালে ফুলকপি করলে বিঘাপ্রতি ৫০-৬০ মণ কপি হয়। কিন্তু দাম কম থাকে। আর গ্রীষ্মকালে কপির ফলন তার অর্ধেক হয়, ফুল ছোট হয় কিন্তু দাম তার তিনগুণ থাকে। গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষটা আমাদের এলাকায় ব্যাপক আকারে হয়েছে। দামও ভালো। তবে বৃষ্টির জোর বেশি থাকায় কারো কারো জমি থেকে পানি বের না হওয়ায় কিছু কিছু জমির কপির একটু ক্ষতি হয়।

পাইকারি সবজি ক্রেতা মজিদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, মাঠ থেকে ফুলকপি কিনে আড়তে নিয়ে বিক্রি করি। তাতে দিনে ৪-৫শ টাকা হলেই খুশি। এ বছর গ্রীষ্মকালীন কপির দাম খুবই ভালো। আর তাই দিন দিন গ্রীষ্মকালীন কপির চাষও বাড়ছে।

খুরচা সবজি বিক্রেতা আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অসময়ে ফুলকপি তাই দাম তো বেশি হবেই। কিছুদিন আগে ৬০-৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এখন শীত আসছে তাই দাম কম, এখন ৪৫-৫০ টাকা কেজি ফুলকপি। আমরা অনেক সময় আড়ত বাদে কৃষকের কাছ থেকে কিনলে লাভ একটু বেশি হয়। আর কপিও ভালো পাওয়া যায়।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসানুল হক বাংলানিউজকে জানান, আগাম কপি চাষ খুবই লাভজনক। এই আবুরী এলাকায় প্রায় ৩শ কৃষক এবার ফুলকপি চাষ করেছেন। গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষে বেশ ঝুঁকি থাকে, তবে কৃষকরা দাম ভালো পাওয়ায় এটি চাষে ঝুকছেন। আর এ বছর গ্রীষ্মকালীন ফুলকপিসহ অন্যান্য সবজি চাষিরা বাজারে খুবই ভালো দাম পেয়েছেন। এতে তারা সবজি চাষে আরো আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

তিনি বলেন, শীতকালীন সময়ে ফুলকপির দাম কম থাকায় অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকরা। তাই কৃষি অফিসের পরামর্শে তারা গ্রীষ্মকালীন ও আগাম শীতকালীন ফুলকপি চাষ করে এবার ভালো লাভ করছেন। আমরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবং মাঠপর্যায়ে গিয়ে চাষিদের এ চাষ সম্পর্কে অবহতি করেছি। সেইসঙ্গে করোনা মহামারির পরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করছি।

মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকরা আগাম সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এতে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে। সরকার কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।