জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের ঐতিহাসিক পাথরঘাটা মাজার ও মসজিদ চত্বরে বেড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। মাজার উন্নয়নের জন্য গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরনো ও ঐহিত্যবাহী গাছ সংরক্ষণ আইন-২০১৬ কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে মাজার কর্তৃপক্ষ। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
জানা যায়, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ঐতিহাসিক পাথরঘাটা হযরত নাছির উদ্দীন শাহ রহমত উল্লাহ মাজার শরীফ ও জামে মসজিদের প্রায় ৪ একর জমিতে বিভিন্ন গাছপালার সঙ্গে যুগ যুগ ধরে বেড়ে ওঠে ১১টি শতবর্ষী রেইনট্রি ও কড়ই গাছ। যান্ত্রিক এই জীবনে একটু খানি প্রশান্তি খুঁজে পেতে মানুষ ছুটে আসতো এসব গাছের তলায়। কিন্তু হঠাৎ করেই মাজার কর্তৃপক্ষ নাম মাত্র মূল্যে শতবর্ষী এসব গাছ বিক্রি করে দেয়। ইতোমধ্য দুটি গাছ ২ লাখ টাকায় বিক্রি করা হলেও বর্তমানে তারা ২টি গাছ মাত্র ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ছবের আলী, ফেরদৌস আলমসহ একাধিক ব্যক্তি অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ‘আমরা এবং আমাদের বাপ চাচারা সেই ছোট বেলা থেকে এসব গাছ দেখে আসছে। একটু শান্তি পেতে এসব গাছের নিচে আমরা বসতে আসি। অথচ মাজার কমিটি নামমাত্র ৭০ হাজার টাকায় শতবর্ষী দুটি গাছ বিক্রি করে দিয়েছে। এর আগে, দুটি গাছ দুই লাখ টাকার উপরে বিক্রি করেছিল বলে মাজার কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে আমরা শুনেছি।
গাছ কাটার শ্রমিক আইজুল ও ফুলমিয়া বাংলানিউজকে জানান, গত ৫ দিন ধরে ১০ জন মিলে এ দুটি গাছ কাটার কাজ করছি। শেষ করতে আগামী আরো ২-৩ দিন সময় লাগবে।
বিশাল দুটি গাছের ক্রেতা ইমরান খান জানান, অনেকেই ৬০-৬৫ হাজারের বেশি না বললেও আমিই চড়া মূল্যে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে গাছ দুটি কিনেছি।
মাজার কমিটির বর্তমান কার্যকরি সদস্য অফির উদ্দীন মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, মাজার উন্নয়নের জন্যই এ গাছ কাট হচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে সবগুলো গাছ কাটা হবে। এর আগে দুটি গাছ ২ লাখ টাকায় বিক্রি করা হলেও এই বছর দুটি গাছ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম মণ্ডল বলেন, গাছগুলো দিন দিন মারা যাচ্ছে। এসব গাছ গরু-ছাগল ও মানুষের জন্য ঝুকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে অল্প মূল্যেই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরমান হোসেন বলেন, মাজারটি কমিটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত। গাছগুলো কাটার বিষয়ে যদি কোনো অনিয়ম ঘটে থাকে এবং এ বিষয়ে যদি কোনো লিখিত অভিযোগ পাই, তবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বনজ সম্পদ পরিবহন বিধিমালায় বলা হয়েছে: সরকারি বা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন যেকোনো জমিতে কোনো গাছ থাকলেই সে তা নিজের ইচ্ছেমতো কাটতে পারে না। এ জন্য স্থানীয় বন বিভাগের কাছ থেকে ওই বৃক্ষ কাটা ও পরিবহনের অনুমতি নিতে হয়। এছাড়াও পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী গাছ সংরক্ষণে ‘বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন-২০১৬’ নামে একটি আইনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২০
এনটি