ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আগৈলঝাড়ায় ক্লিনিকে সন্তানসহ প্রসূতির মৃত্যু, আটক ২

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০২০
আগৈলঝাড়ায় ক্লিনিকে সন্তানসহ প্রসূতির মৃত্যু, আটক ২

বরিশাল: বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সরকারি অনুমোদনহীন একটি মাতৃ সদন ক্লিনিকে ডেলিভারি করাতে গিয়ে আয়াদের কারণে গর্ভের সন্তানসহ প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে।  

এ ঘটনায় ক্লিনিকটি সিলগালা করে অভিযুক্ত দুই আয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

 

পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে প্রসূতির মরদেহ উদ্ধার করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম সরোয়ার।

নিহতের স্বজন ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ চাঁদত্রিশিরা গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক মন্টু বাহাদুর ও সীমা বেগম দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। সীমা বেগমের চতুর্থ সন্তানের প্রসব বেদনা শুরু হলে সোমবার সকাল সাতটার দিকে তাকে পশ্চিম বাগধা রেড ক্রিসেন্ট মাতৃ সদন ক্লিনিকে নেওয়া হয়।  সরকারি অনুমোদনবিহীন ওই ক্লিনিকে কোনো রেজিস্ট্রার চিকিৎসক না থাকার পরেও সেখানে কর্মরত আয়া রাশিদা বেগম ও মায়া বেগম সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সীমা বেগমের সন্তান প্রসব করাতে যান। তবে সীমার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পরলে ওই দুই আয়া তাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দ্রুত সটকে পরেন। পরে ক্লিনিকের আয়াদের কথানুযায়ী স্বামী মন্টু দ্রুত সীমাকে পয়সারহাট আদর্শ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানের চিকিৎসকেরা সীমাকে দ্রুত উপজেলা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তাকে নিয়ে উপজেলা ৫০ শয্যার হাসপাতালে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মামুন মোল্লা সীমাকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্বজনদের দাবি প্রথম প্রসব করাতে গিয়েই গর্ভের সন্তানসহ সীমার মৃত্যু হলেও বিষয়টি গোপন রেখে আয়ারা অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

এদিকে এ খবর পেয়ে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার ও ওসি মো. গোলাম সরোয়ার হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তারা ময়নাতদন্তের জন্য সীমার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। পাশাপাশি অভিযুক্ত দুই আয়া রাশিদা বেগম ও মায়া বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

ডা. মামুন মোল্লা জানান, তার কাছে আসার পরে সীমার কোনো পালস্ তিনি পাননি। তাই তাকে কোনো চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। প্রসবজনিত কারণে সীমার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়ে ময়নাতদন্তে রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন জানান, উপজেলায় যতগুলো বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে তার তালিকায় ‘রেড ক্রিসেন্ট মাতৃ সদন’ ক্লিনিকের নাম নেই। সরকারি কোনো অনুমোদন ছাড়া কিভাবে তারা রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা দেয় তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।  

তিনি আরও বলেন, ওই ক্লিনিকের কাগজপত্রসহ সব ধরনের কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য পুলিশসহ স্যানিটারি ইন্সপেক্টর সুকলাল সিকদারকে পাঠানো হয়েছে। তিনি ফিরে এসে রিপোর্ট দেওয়ার পরে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া কাগজপত্রবিহীন কারণে কথিত ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর সুকলাল সিকদার জানান, সেখানে ক্লিনিক পরিচালনার জন্য কোনও কাগজপত্র বা কোনো লোকজন পাওয়া যায়নি। দুই জন আয়াকে পাওয়া গেছে, তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

থানার ওসি মো. গোলাম সরোয়ার জানান, ঘটনার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত দুই আয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ঘটনায় মৃত গৃহবধূ সীমার স্বামী মামলা দায়েরের প্রস্ততি নিচ্ছে বলেও জানান ওসি মো. গোলাম সরোয়ার।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২০
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।