সিলেট: স্থানীয়দের সহযোগিতায় বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন।
সোমবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
তিনি বলেন, রোববার (৮ অক্টোবর) তাদের কাছে খবর আসে বরখাস্ত এসআই আকবর ভারতে পালিয়ে যেতে পারেন। এ খবরে আমরা কানাইঘাট সীমান্তবর্তী এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করি। সকালে কানাইঘাট ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে আকবর গ্রেফতার দেখানো হয়।
এসপি বলেন, তার পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আমরা বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছিলাম। আমাদের সংশ্লিষ্ট অফিসার ইনচার্জদেরও সতর্কবস্থায় রেখেছিলাম। এছাড়াও জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সহায়তায় তাকে আটক করতে সক্ষম হই। এক্ষেত্রে জেলা গোয়েন্দা পুলিশও সহায়তা করে।
পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন বলেন, রায়হান হত্যার ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়ার জন্য পুলিশের তরফ থেকে চেষ্টা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আকবরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এরআগে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছিল, রায়হান মারা যাওয়ার দু’দিন পরই আকবর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ দিয়ে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সে আগে ভারতে পালিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারে। তবে আমরা তাকে সীমান্ত এলাকা থেকেই গ্রেফতার করেছি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আকবরকে আটকের কিছু ভিডিওচিত্র ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা গেছে একদল যুবক আকবরের হাত পা বেঁধে পাহাড়ি ছড়া দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে আসছেন। এসময় ওই যুবকরা আকবরকে বিভিন্ন প্রশ্নও করেন।
ওই যুবকরা বাংলায় কথা বললেও তাদের শারীরিক গঠন ও কণ্ঠস্বর ছিল খাসিয়া সম্প্রাদায়ের বা অবাঙালিদের মতো। এছাড়া জায়গাটির ছবিও দেখা গেছে ভারতের অভ্যন্তরের!
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি জানতে পেরেছি। সেটি এখনো আমরা দেখিনি। আকবরকে আমরা বাংলাদেশ অভ্যন্তরে সীমান্ত থেকেই স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় গ্রেফতার করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আইন যে কেউ অমান্য করলে তাকে আইনের দোরগোড়ায় সোপর্দ করতে হবে। এসআই আকবর জঘন্য কাজ করেছে। তাকেও শাস্তি পেতে হবে, এটা হচ্ছে আইন।
তিনি বলেন, এরআগে সিলেট রেঞ্জ পুলিশ এমসি কলেজের ঘটনায় প্রধান আসামিসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছিল।
এরআগে সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুর ২টায় কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকায় জনতার হাতে আটক আকবরকে পুলিশ গ্রেফতার দেখায়। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা টিমসহ একাধিক টিম তাকে জনতার হাত থেকে গ্রেফতার করে সিলেটে নিয়ে আসে। তখন পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে জনতা আকবরের ফাঁসি চেয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, স্থানীয় খাসিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে প্রথমে আকবর আটক হন। এসময় নিজেকে বাঁচাতে কেঁদে ফেলেন আকবর কাঁদতে থাকেন এবং তাকে ছেড়ে অনুনয় বিনয় করেন। এসময় জনতা তাকে রশি দিয়ে বাঁধেন এবং পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, আকবরকে ভারতের খাসিয়ারা আটক করেছে। পরে তাকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করা হয়। অবশেষে ঘটনার ২৮ দিন পর গ্রেফতার হলেন আকবর।
এদিকে, রাত পৌনে ৮টার দিকে রায়হান উদ্দিন হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে আকবরকে হস্তান্তর করা হয়।
গত ১১ অক্টোবর ভোরে রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করা হয়। পরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।
রায়হান ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হলেও নিহতের পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ ছিল পুলিশ ধরে নিয়ে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরিবারের অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্ত দল ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর সত্যতা পেয়ে জড়িত থাকায় ইনচার্জ আকবরসহ চার পুলিশকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করেন। বরখাস্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন- বন্দরবাজার ফাঁড়ির কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন। ঘটনার পর অন্য ছয়জন পুলিশ হেফাজতে থাকলেও আকবর পলাতক ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২০
এনইউ/এএ