ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তার পরামর্শে পালিয়েছিলাম: আকবর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০২০
সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তার পরামর্শে পালিয়েছিলাম: আকবর আকবর হোসেন ভূঁইয়া

সিলেট: এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতায় পালিয়েছিলেন রায়হান উদ্দিন হত্যার প্রধান অভিযুক্ত বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আকবরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি একা মারিনি।

আরো পাঁচ-ছয়জন মারছিল। এজন্যে সে মরে গেছে। আমি তাকে মেডিক্যাল পাঠিয়েছিলাম। ’

মারো নিতে পালিয়ে গেলে কেনো? স্থানীয়দের এমন প্রশ্নের জবাবে এসআই আকবর ভুঁইয়া বলেন, সাসপেন্ড করছে, এরেস্ট হতে পারে।

সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে 'নির্যাতনে' রায়হান আহমদ নিহতের প্রায় এক মাস পর এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত বহিষ্কৃত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া আটক হয়েছেন।  

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত এই পুলিশ সদস্যকে আটক করেছে আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে আকবরকে বলতে শোনা যায়, আমি একা মারিনি। পাঁচ-ছয়জন মারছিল। এজন্যে মরে গেছে।

‘তুমি কেন পালিয়ে গেলে?’ স্থানীয়দের এমন প্রশ্নের জবাবে বহিষ্কৃত এসআই আকবর ভুঁইয়া বলেন, ‘আমাকে সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছিল, তুমি আপাতত চলে যাও। কয়েকমাস পরে আইসো। দুইমাস পরে আসলে সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আবার সব হ্যান্ডেল করা যাবে। তবে কার নির্দেশে পালিয়েছেন এ সম্পর্কে কিছু বলেননি আকবর। শুধু জানান, সাসপেন্ড করছে, এরেস্ট হতে পারে।

ওই যুবকরা বাংলা কথা বললেও অবাঙালিদের মতো ছিল তাদের কণ্ঠস্বর। ভিডিওর যুবকদের কথাবার্তায় ভারতের খাসিয়া আদিবাসী হতে পারেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ভিডিওতে দেখা যায়, আকবরের হাত-পা বাঁধতে থাকা লোকজন বলছিলেন, মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য সে মানুষ মেরে ফেলেছে। ওই যে ইন্টারনেটে ভিডিও ছাড়ছে। রায়হান নাম। তখন তাকে আরেকজন জিজ্ঞেস করেন, তোর নাম বল; তিনি বলেন, ‘আকবর’।

এদিকে, গোয়েন্দা সূত্রগুলো আগেই জানিয়েছিল এসআই আকবর ভারতে পালিয়ে গেছেন। ভারতের শিলং পুলিশ বাজারে তার অবস্থান ছিল।

সোমবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসপি ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা গতকাল (রোববার) ইনফরমেশন পেয়েছিলাম কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে সে পালিয়ে যেতে পারে। এজন্য আমরা সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছিলাম্ এবং কানাইঘাট সীমান্ত এলাকার কিছু বন্ধুর মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। বিশেষ করে এই টিমে নেতৃত্ব দেন কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ থানার ওসিসহ পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

গত ১১ অক্টোবর ভোর রাতে রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করা হয়। পরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।

‘রায়হান ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন’ পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হলেও নিহতের পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ ছিল পুলিশ ধরে নিয়ে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরিবারের অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্ত দল ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর সত্যতা পায়। এতে জড়িত থাকায় ইনচার্জ আকবরসহ চার পুলিশকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্যরা হলেন- বন্দরবাজার ফাঁড়ির কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন। ঘটনার পর অন্য ছয়জন পুলিশ হেফাজতে থাকলেও আকবর পলাতক ছিলেন।

আরও পড়ুন: পুঁতির মালা পরে ‘খাসিয়া’ সেজেছিলেন আকবর

বাংলাদেশ সময়: ২৩২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২০
এনইউ/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।