ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বরাদ্দ কমায় রাজশাহীতে টিএসপি সংকট, চিন্তিত কৃষক

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২০
বরাদ্দ কমায় রাজশাহীতে টিএসপি সংকট, চিন্তিত কৃষক টিএসপি সার

রাজশাহী: চাহিদার তুলনায় সরকারিভাবে বরাদ্দ কমে যাওয়াই রাজশাহীতে টিএসপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে ঘাটতি থাকায় ফসল নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে কৃষকরা।

একদিকে বরাদ্দ কম, আবার অন্যদিকে চাহিদা থাকায় নির্ধারিত দামের প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে এ সার। এছাড়া ডিএপিও চাহিদা মতো পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় সারা বছর টিএসপি সারের সরকারি বরাদ্দ ৮ হাজার ৪১৮ টন। অর্থাৎ এক লাখ ৬৮ হাজার ৩৬০ বস্তা।  

সম্প্রতি টিএসপি সারের বরাদ্দ কমিয়ে ডিএপি সারের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।  

রাজশাহীর কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টিএসপি ও ডিএপি রাসায়নিক সার সংকটে ভুগছেন চাষিরা। আলু, পেঁয়াজ, রসুনসহ রবি মৌসুমের চাষিরা বিপাকে পড়েছেন সার নিয়ে। বিশেষ করে আলু চাষে টিএসপির ব্যাপক ব্যবহার থাকায় সার নিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন তারা। বরাদ্দ কম থাকায় বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের। সার পেতে অনেকে হন্যে হয়ে ঘুরছেন তারা। বাজারে সবোর্চ্চ এক হাজার টাকা বস্তার টিএসপি বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে সাড়ে ১৬০০ টাকায়। বরাদ্দ বাড়লেও ডিএপি সারও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। এতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জানা যায়, চলতি মৌসুমী রাজশাহীতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার হেক্টর (প্রায় ২ লাখ ৬২ হাজার ৫শ বিঘা)। আলুর জমি প্রস্তুতকালে চাষিরা প্রতিবিঘা জমিতে এক বস্তা টিএসপি সার দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে জেলায় শুধু আলুচাষেই টিএসপি সারের প্রয়োজন প্রায় ২ লাখ ৬২ হাজার ৫শ বস্তা (প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি)। অথচ সারা বছরের টিএসপি সারের সরকারি বরাদ্দ ৮ হাজার ৪১৮ টন। অর্থাৎ এক লাখ ৬৮ হাজার ৩৬০ বস্তা। এতে আলুচাষেই টিএসপি সারের ঘাটতি থাকছে ৯৪ হাজার ১৪০ বস্তা।

জেলার মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের নুড়িয়াক্ষেত্র এলাকার কৃষক মো. মাহমুদুন্নবী বলেন, ১৫ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে আলুচাষ করছি। এবার ৫০ বিঘা জমিতে আলুচাষ করছি। চাহিদা মতো পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় এবার টিএসপি সারের দাম বেড়েছে। সার না পাওয়ার অজুহাতে ডিএপিসহ অন্যান্য সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ডিলাররা। তবু চাহিদা মত পাওয়া যাচ্ছে না।

একই উপজেলার মৌগাছি গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, টিএসপির পাশাপাশি ডিএপি সারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এবার প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করছি। সার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, গতবছরের চেয়ে এ বছর সরকারিভাবে প্রায় অর্ধেক বরাদ্দ টিএসপি সারের। সেক্ষেত্রে ডিএপির বরাদ্দ বাড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের চাষিরা বিশেষ করে আলুচাষে ব্যাপক পরিমানে টিএসপি সার ব্যবহার করেন। একদিকে বরাদ্দ কম এবং অন্যদিকে একসঙ্গে রোপণের ফলে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী ইউনিটের সভাপতি ওছমান আলী বলেন, শুধু টিএসপি, ডিএপি নয়, কোনো ধরনের রাসায়নিক সার সরকার নির্ধারিত দামের বেশি নেওয়ার এখতিয়ার নেই। খুচরা বিক্রেতারা কিছু বেশি নিতে পারেন, যা আমরা খবরদারি করতে পারবো না। কোনো ক্রমেই সরকারের অনুমোদিত ডিলার নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে সার বিক্রি করতে পারবেন না। কোনো ডিলার যদি এমনটা করেন তবে তার ডিলারশিপ বাতিল হয়ে যাবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের মাটি আলু চাষের উপযোগী। তাই আলুর সময়ে সার নিয়ে কিছুটা হলেও বিড়ম্বনা দেখা দেয়। চাষিরা একসঙ্গে সার কেনায় কিছুটা সংকট দেখা দেয়।  

তিনি আরও বলেন, এবার টিএসপি সারের বরাদ্দ কমিয়ে ডিএপি সারের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। অনেক চাষি মনে করেন ডিএপি দিলে আলু গাছের শিকড় পচে যেতে পারে। এই ধারণাটি একবারে ভুল। যদি সারের জন্য আলুর চাষ ব্যাহত হলে আমরা সারের বরাদ্দ বাড়ার জন্য ব্যবস্থা নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২০
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।