ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিবন্ধিতা জয় করে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন ফাহিম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২০
প্রতিবন্ধিতা জয় করে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন ফাহিম ফাহিম

মাগুরা: শারীরিক প্রতিবন্ধিতা জয় করে বাড়িতে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়া সাড়া জাগানো মাগুরার ‘বিস্ময় তরুণ’ ফাহিম-উল করিম মারা গেছেন।  

বুধবার (১১ নভেম্বর) দিনগত রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, বুধবার সকালে ফাহিম অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ডুচেনেমাসকিউলার ডিসট্রফি (ডিএমডি) রোগে ভুগছিলেন মেধাবী ওই তরুণ।  

ফাহিমের বাবা রেজাউল করিম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। দেশের বাইরে নিয়ে  আমার ছেলেকে (ফাহিম) উন্নত চিকিৎসার করাতে পারলে পুরোপুরি সুস্থ না হলেও শারীরিক অবস্থার কিছুটা হলেও ভালো হতো। কিন্তু অর্থের অভাবে আমি তা করাতে পারিনি।

এর আগে ২২ বছর বয়সী ফাহিম বিরল এক রোগে গোটা শরীর অচল হয়ে যায়। সচল শুধু মাথা ও ডান হাতের দুটি আঙুল। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনেন তিনি।  তার কাজে খুশি হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ফাহিমকে একটি ল্যাপটপ উপহার দিয়েছিলেন।

ফাহিম প্রতিবন্ধকতা জয় করে মেধার অদম্য শক্তি কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করেছিলেন। অনেক যুবকের জন্য তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। দৃঢ় মনোবল, প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও মেধা কাজে লাগিয়ে ফাহিম সফল ফ্রিল্যান্সার হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে অন্যের সহযোগিতা, প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো টাকা ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তিনি একটি ল্যাপটপ কিনেছিলেন। এরপর ইন্টারনেটে গুগল ও ইউটিউব ঘেঁটে বিভিন্ন কাজ শিখেছিলেন। ২০১৭ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন মার্কেটে ফাইবারে গিগ খুলে কাজ খুঁজতে থাকেন তিনি। ক’দিনের মধ্যে পাঁচ ডলারের একটি কাজ পেয়েছিলেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যে সফলভাবে কাজটি করার জন্য বায়ার তাকে আরও ১০ ডলার বোনাস দিয়েছিলেন। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ফাহিমকে। প্রথমে ব্যানার ও বিজনেস কার্ড দিয়ে কাজ শুরু করলেও তিনি সব ধরনের কাজই করতেন।

কাজের দক্ষতার কারণে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সার ফাহিম বিশ্বের ৩০ থেকে ৩৫টি দেশের কাজ করতেন। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে গত চার বছর ধরে ফাহিম মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে আয় করেছিলেন। তার উপার্জনে পরিবারের সচ্ছলতা ফিরেছিলো।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।