ঢাকা: ভোট বানচালের জন্য কেন্দ্রে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের টার্গেট করে ককটেল ছুড়েছিলেন সোহেল মিয়া। নির্বাচনের দু’দিন আগে থেকে সোহেলের মোবাইল ফোনে সুমন নামে বিএনপি সমর্থনকারী বা নেতা বার বার এই নির্দেশনা দিয়ে আসছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদীয় ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনে তুরাগ থানাধীন কামারপাড়া এলাকায় একটি ভোট কেন্দ্রে ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার ধাওয়ায় পুলিশের হাতে ককটেলসহ আটক হয় মো. সোহেল মিয়া (২৬)। তবে তার সঙ্গে থাকা নির্দেশদাতা সুমন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে এসব তথ্য জানায় ককটেল নিক্ষেপকারী সোহেল মিয়া। সোহেল মিয়া টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় বসবাস করেন। সে ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকার মো. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।
অপর দিকে, আব্দুল্লাহপুরের মালেকা বানু স্কুলের ভোট কেন্দ্রে ভোট বানচাল করতে ৮ থেকে ১০ জন দুর্বৃত্তরা ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা ৩ জনকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি তাজা ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আটক সোহেল ককটেল নিক্ষেপের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। গত দুইদিন আগে থেকে সোহেলকে সুমন নামে একজন তার মোবাইল ফোনে ককটেল নিক্ষেপের জন্য নির্দেশ দিয়ে আসছিল। কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের জন্য সুমনের কাছ থেকে অগ্রিম ২০০ টাকা নিয়েছিল সোহেল।
জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও জানায়, নির্দেশদাতা সুমন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কামারপাড়া এলাকায় ককটেল নিক্ষেপের আগে সুমনের সঙ্গে সোহেল মিয়া দেখা করে নিজেরা পরামর্শও করেছিল বলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
এ বিষয়ে উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে আব্দুল্লাহপুর ও তুরাগ এলাকার দুটি স্থানে ভোট কেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আব্দুল্লাহপুর থেকে ১১ জনকে এবং তুরাগ থেকে ১ জনকে ককটেলসহ আটক করা হয়।
তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আটক সবাই বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একের পর এক গণপরিবহনে আগুনের ঘটনার পর নগরী জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে এই আসনে ভোটগ্রহণ চলছিল। তবে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আব্দুল্লাহপুরের মালেকা বানু স্কুলে ভোট কেন্দ্রের সামনে একাধিক ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এরপরের সময় একে একে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী গণপরিবহণের বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
রাজধানীর শাহবাগ, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, মতিঝিল, নয়াবাজার, ভাটারা ও শাহজাহানপুর এলাকায় সাতটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে, প্রেসক্লাবের সামনে, গুলিস্তানে রমনা ভবনের সামনে, মতিঝিলে মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে এবং নয়াবাজার, শাহজাহানপুর, বারিধারার কোকাকলা মোড় এলাকায় মোট সাতটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি স্থানে ফায়ার সার্ভিসের একটি করে ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ঢাকা-১৮ আসনে সংসদীয় উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী কোনও পক্ষ নাশকতার উদ্দেশ্যে একযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন দেওয়া ঘটনা ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। নির্বাচনী এলাকার দু’টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ও ভোটগ্রহণের সময়কালীন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহণে দুর্বৃত্তদের আগুন দেওয়া ঘটনা এক কিনা? সেগুলো যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ওয়ালিদ হোসন বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। টহল সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশির জন্য পুলিশের চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে রাজধানীর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২০
এসজেএ/জেআইএম