খুলনা: চারিদিকে নিস্তব্ধতা। কুয়াশার চাদরে মোড়ানো ঘুমন্ত গ্রাম।
খেজুরগাছ থেকে রস আহরণের জন্য দা ও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুরগাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছ প্রস্তুত করছেন তিনি। এই ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যেও কিছু সময় কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি জানান, ৪০ বছর ধরে তিনি খেজুরগাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন। এবারও প্রায় চারশ খেজুরগাছ তিনিসহ তার লোকজন কাটবেন। রসের মৌসুম গাছ কেটে যা আয় করেন তা দিয়ে তার সারা বছর চলে যায়। তার মতো ডুমুরিয়ার বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা এখন খেজুরগাছ কাটার সরঞ্জাম নিয়ে তা প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অনুরূপভাবে জেলার ফুলতলা, বটিয়াঘাটা, রূপসা, পাইকগাছা, তেরখাদা, দিঘলিয়া উপজেলার গাছিরাও এখন খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খেজুরগাছ থেকে রস বের করতে তিন স্তর পেরিয়ে পক্ষকাল পরেই রস আহরণ শুরু হয়। অনেক গ্রামেই এখন চোখে পড়ছে খেজুরগাছ প্রস্তুতির দৃশ্য। গাছিরা এখন মহা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
শীত শুরু আসতে না আসতেই অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুরগাছের কদর বাড়ে। গাছিরা খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ আহরণের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছেন। শুরু করেছেন প্রাথমিক পরির্চযাও। যাকে কেউ কেউ বলেন গাছ তোলা। আর ক’দিন পরেই আবার গাছে বাকলা চাছ দিয়ে নলি ও গুছা বসানো হবে।
জানা যায়, হেমন্তের শেষেই শীতের ঠাণ্ডা পরশে গাছিরা খেজুরগাছ প্রস্তুত করেন। এভাবেই চলে কিছুদিন। ক’দিন পারে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তা থেকে খেজুর গুড় তৈরির পালা, শুরু হয়ে চলবে বসন্তের শেষ নাগাদ পর্যন্ত।
বিকেল বেলায় কাটা গাছে হাঁড়ি দেবেন গাছিরা। আবার সকালে সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গেই রস সংগ্রহ করে গাছ থেকে নামবেন। সেই মনোলোভা দৃশ্য সত্যিই মোহনীয়। সে সৌন্দর্য স্পর্শে নয়, অনুভবের।
গাছিরা জানান, এক যুগ আগেও শীতের সকালে চোখে পড়তো রসের হাঁড়ি ও খেজুরগাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য। সাত সকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি হাঁকডাক দিতেন। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলতো খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠাপুলির আয়োজন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এক সময় খেজুর রস প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো। এখন গাছ যেমন কমে গেছে তেমনি কমে গেছে গাছির সংখ্যাও।
অনেক গাছি জানান, আগের মতো গ্রামে খেজুরগাছ নেই। খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদাও কমে গেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলায় এখনো বেশকিছু খেজুরগাছ রয়েছে। ইতোমধ্যে গাছিরা গাছ প্রস্তুত করা শুরু করেছেন। খেজুরের গাছ ও গাছির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগের মতো খেজুর গাছও নেই, নেই দক্ষ গাছি কিংবা গুড়-পাটালি তৈরির কারিগর। অনেকে বেড়িবাঁধে খেজুরগাছ লাগাচ্ছেন। অন্যান্য গাছের মতো খেজুরগাছ ও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। খেজুর গুড় শিশুর মেধা বিকাশে সহায়তা করে। খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা থেকে গুড় তৈরি পর্যন্ত একটি শিল্প। যা আজ বিলুপ্তির পথে।
ওই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, উপজেলায় এখন ৪ লাখ ২৫ হাজার ৯২৫ খেজুরগাছ রয়েছে। আর গাছির সংখ্যা প্রায় ৩০০ জনের মতো।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২০
এমআরএম/এএটি