ঢাকা: বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট শ্রমিকনেতা শাহ্ আতিউল ইসলামের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে সংগঠনটির সদ্যপ্রয়াত কেন্দ্রীয় সভাপতির স্মরণে এ সভা আয়োজিত হয়।
ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তারের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন সংগঠনটির অর্থ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আতিউল ভাই দেশের ভেতরে থেকেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তিনি যেমন সার্টিফিকেট গ্রহণ করেননি তেমনি মুক্তিযুদ্ধ শেষ করে মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছেন। সেই লড়াই আজীবন জারি রেখেছেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জোনায়েদ সাকি বলেন, বর্তমানে সরকার ও মালিকপক্ষ নানাভাবে শ্রমিক আন্দোলনকে দূষিত করছে এবং আইনিভাবেও যেভাবে শ্রমিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করছে- তাকে রুখতে হবে। শ্রমিকদের বিভক্তির অবস্থাকে বদলাতে হলে তার দিশা ঠিক করতে হবে। সম্মিলিত হয়ে আরো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মানুষের মর্যাদা, অধিকারকে ফিরিয়ে আনতে হলে ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করতে এই নিপীড়ক সরকারকে গলায় গামছা বেঁধে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আতিউল ভাই আমাদের অনুপ্রেরণা।
সভার সভাপতি ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক তাসলিমা আখ্তার বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার মতো নিবেদিতপ্রাণ, সংগ্রামী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের অভাব বাংলাদেশের আগামী দিনের শ্রমিক সংগ্রামে প্রতি পদে পদে অনুভূত হবে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সংগ্রামী ছিলেন বলেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েও শ্রমিক রাজনীতি ও শ্রমিকদের জীবনের সাথে সহজে মিশে যেতে পেরেছিলেন। সাধারণ শ্রমিকদের একদিকে যেমন তিনি সংগঠিত করেছেন, আন্দোলিত করেছেন অন্যদিকে তাদের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিতও করেছেন। শোষণ ও নিপীড়নের জীবন যে রাজনীতির মাধ্যমেই পাল্টাতে হবে সে কথাই তিনি মর্মে ধারণ করতেন এবং শ্রমিক আন্দোলনে প্রয়োগ করেছেন।
শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, যখন শাহ আতিউল ইসলাম ট্রেড ইউনিয়ন করেছেন তখন কোনো অর্থবিত্তের মোহে পা দেননি, কোনো দুর্নীতির কাছে মাথা নত করেননি, ফেডারেশনগুলোর সংকীর্ণতার কাছে হার মানেননি। স্কপ সংগ্রাম-আন্দোলন ছেড়ে দিলে শাহ আতিউল ইসলাম সঙ্গে সঙ্গে স্কপ পরিত্যাগ করেছেন।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, তার ২০ বছর বয়স থেকেই তিনি আন্দোলন করে এসেছেন। শ্রম আইনটা কীভাবে গণতান্ত্রিক করা যায়, মজুরির আন্দোলনকে শক্তিশালী করা যায় তার সংগ্রামই করে গেছেন।
ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম পটল বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই ছিল তার সারা জীবনের পাথেয়। শ্রমিক আন্দোলনে বৃহৎ ঐক্যবদ্ধতা আনা এবং দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামই ছিল তার সাধনা।
মোশরেফা মিশু বলেন, জীবনব্যাপী আন্দোলন করার অন্যতম যোদ্ধা হচ্ছেন আতিউল ভাই। তার স্বপ্নই ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন। সে সংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়াই এখন আমাদের দায়িত্ব, আমরা রাজপথে আছি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাফি রতন বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবির সঙ্গে সঙ্গে শ্রমঘণ্টা নিয়ে কথা বলতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সব খাতে সমকাজে সমমজুরির লড়াইকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।
মোশাররফ হোসেন নান্নু বলেন, শাহ আতিউল ইসলামের জীবন, আদশ-নিষ্ঠা স্বর্ণাক্ষরে আমাদের কর্মীদের মাঝে টিকে থাকবে। তিনি আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তার ৫৭ বছরের রাজনৈতিক জীবন আমাদের দিশা দেবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, শাহ আতিউল ইসলাম শ্রমিক আন্দোলনের ব্যবহারিক কাজই শুধু গড়ে তোলেননি, গভীর রাজনৈতিক মতাদর্শিক কাজও গড়ে তুলতেন। তিনি শ্রমিক রাজনীতির কোনো গর্তেই একদিনের জন্যও পা পিছলে পড়েননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২০
এমজেএফ