সিলেট: ছেলে হত্যা মামলার মূল আসামি সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া গ্রেফতার হলেও এবার আলামত নষ্টকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন নিহত রায়হান উদ্দিনের মা সালমা বেগম।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকায় নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন আমার ছেলের পরনের টি-শার্ট ও নীল রঙের প্যান্ট ছিল। কিন্তু হাসপাতালে দেখা গেছে, তার পরনে লাল রঙের শার্ট। প্যান্টও বদলানো হয়েছে, যেটা তার শরীরের চেয়েও অনেক ছোট ছিল। এটা কারা করেছে, তা আমি জানি না। এছাড়া আমার ছেলের মোবাইলফোন ও মানিব্যাগ এখনো পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। মূলত সব তাকে নির্যাতনের সময় মূল আলামত পরনের কাপড় নষ্ট করা হয়েছে।
এটা কারা করলো? প্রশ্ন রেখে তিনি সেসব অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার দাবি জানিয়েছেন।
আকবরকে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার দাবি জানিয়ে বলেন, আমি চাই, আমার ছেলের হত্যার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক। তারা চার ঘণ্টা মধ্যেই আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে।
সালমা বেগম বলেন, মামলার তদন্ত নিয়ে আমি সন্দেহ পোষন করি না। কেননা পুলিশের তৎপরতার কারণেই আমার ছেলে হত্যার মূল অভিযুক্ত পলাতক থাকা সাবেক এসআই আকবর গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু আমার নিরাপরাধ ছেলেকে কারা, কি জন্য মেরেছে এটি এখনও বেরিয়ে আসেনি।
থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহীসহ অন্য পুলিশ সদস্যরাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দেওয়ায় মামলার সঠিক বিচার পাওয়া নিয়ে সঙ্কিত তিনি।
তবে মূল আসামি আকবরকে গ্রেফতার করতে পারায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। সেসঙ্গে খাসিয়া সম্প্রাদায়সহ সীমান্ত এলাকার লোকজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডের পর সাংবাদিক ও এলাকাবাসীসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ রায়হানের পরিবারের পক্ষে থাকায় তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।
এসময় রায়হান হত্যার পর থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া বৃহত্তর আখালিয়া (বারো হামছায়া) সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান পরিষদের আহ্বায়ক সিলেট সিটি করপোরেশনের নয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা রায়হান হত্যার ন্যায়বিচার প্রত্যাশী। এই মুহূর্তে আমাদের প্রত্যাশা সুষ্ঠু বিচার। যাতে অপরাধীরা পার না পায়। তাই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কোনো অবহেলা থাকলে সিলেটবাসী কাউকে ক্ষমা করবে না। রায়হান হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এলাকাবাসী রাজপথ ছাড়বে না। সেই সময় পর্যন্ত সবার সহযোগিতা কামনা করেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, রায়হান হত্যার ঘটনায় আসামিরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি না দিলেও প্রত্যক্ষদর্শী তিন পুলিশ সদস্য আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। যে কারণে এটার মূল গ্রাউন্ড মৃত্যুদণ্ড সেই সাজা হবে, আমরা আশাবাদী।
মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে রায়হান উদ্দিন হত্যায় বাদী পক্ষের আইনজীবী প্যানেল ব্যারিস্টার ফয়েজ আহমদ, অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিন আহমদ, অ্যাডভোকেট ফয়েজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
এসময় অন্যান্যের উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, আট নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস, অত্র ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ দাস, রায়হানের মামা শওকত আলী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২০
এনইউ/এএটি