ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ইউএনওর বিরুদ্ধে পাল্টা ৭ দফা অভিযোগ চেয়ারম্যানের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২০
ইউএনওর বিরুদ্ধে পাল্টা ৭ দফা অভিযোগ চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর অনিয়মের পাল্টা ৭ দফা অভিযোগ তুলেছেন অভিযুক্ত সেই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস।

শনিবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৭ দফা অভিযোগ তোলেন তিনি।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাতে উপজেলা পরিষদ 
চেয়ারম্যানের অসদাচরণ, দুর্ব্যবহার ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ তুলে ১৭ জন অফিসারের গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়ের করে বিভিন্ন দফতরে অনুলিপি পাঠান ইউএনও।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, ৪৭ হাজার ভোটে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দুর্নীতিমুক্ত মডেল উপজেলা গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করি। দায়িত্ব গ্রহণের পরে বিভিন্ন দফতরে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আসায় কর্মকর্তাদের সতর্ক করি এবং জনগণের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে তদন্ত করতে ইউএনওকে নির্দেশ দেই। একইসঙ্গে বিগত অর্থ বছরের উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতি চেয়ে দফতরগুলোতে চিঠি পাঠাই। এতে সব দফতরের কর্মকর্তারা অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একইসঙ্গে নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর পেয়ে ইউএনওকেও দুর্নীতিমুক্ত থাকার আহ্বান জানাই। এটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়ায় বলে যোগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান।  

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) মাসিক সমন্বয় সভায় এসব অনিয়মের বিরোধিতা করায় ইউএনও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে আমি সভা অসমাপ্ত রেখে নিজের কার্যালয়ে চলে আসি। এরপর ইউএনও তাকে গালমন্দের মিথ্যা নাটক তৈরি করে নিজেদের অনিয়মের অপরাধ ঢাকতে অফিস রেখে সব কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে আমার বিরুদ্ধে নানান মিথ্যা অভিযোগ আনেন তারা, যা মিথ্যা ও বানোয়াট।

সংবাদ সম্মেলনে ইউএনওর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগগুলো হলো- ইউএনও মনসুর উদ্দিন যোগদানের পর থেকে কাল্পনিক ও একই প্রকল্প বারবার দেখিয়ে খেয়াল খুশিমত সরকারি টাকা ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন। মুজিববর্ষের নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। হাটবাজারের ইজারার টাকা দীর্ঘদিন নিজস্ব তহবিলে রেখে তার ১০ শতাংশ কমিশন নিয়ে জমা করেন। উপজেলা কোয়ার্টার মেরামতসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ নিজেই ঠিকাদার হিসেবে করছেন ইউএনও। চাকরি দেওয়ার নামে ঘুষ, সরকারি গাছ কর্তনসহ  দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবে সাবেক গাড়িচালক আজিজুলকে ব্যবহার করতেন ইউএনও। যা প্রকাশ পেলে নিজেকে বাঁচাতে চালক আজিজুলকে বরখাস্ত করেন। রেজুলেশন ছাড়াই উন্নয়নমূলক কাজ নামকাওয়াস্তে করে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন ইউএনও। জনস্বাস্থ্যের টিউবওয়েল বিতরণে কোনো ধরনের পরিপত্র না মেনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। যেখানে সভাপতি হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরও নেওয়া হয়নি। নিজের বানানো নিয়মে উপজেলার কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইউএনও।  

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করায় ইউএনও মনসুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সভায় ও অফিসে প্রতিবাদ করায় আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা অভিযোগ আনেন তিনি। আমার আচরণের ত্রুটি থাকলে তার আলামত উপজেলাবাসী আগেই জানতেন এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতেন। পুরো ছাত্র জীবনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে ছিলাম। খারাপ মানুষ হলে বঙ্গবন্ধুর কন্যার আশ্রয় পেতাম না। জীবনে কোনো অফিসে কোনো অভিযোগ বা মামলার মুখোমুখি হয়নি। ইউএনওসহ অফিসারদের দায়ের করা অভিযোগটি মিথ্যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেও দাবি করেন তিনি।  

এর আগে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কাছে দায়ের করা ইউএনওসহ ১৮ কর্মকর্তার অভিযোগে প্রকাশ, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিধিবিধান ও নীতিমালা লংঘন করে কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে সেই দফতরের কর্মকর্তাকে অশ্রব্য ভাষায় গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকিও দেন চেয়ারম্যান।

উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, ভিজিডি, মাতৃত্ব ভাতা, কৃষি প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধাভোগীর তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন চেয়ারম্যান। বিধি বহির্ভূতভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেওয়ায় এবং প্রাক্কালন কাজ শেষ না হতেই বিল পরিশোধ না করায় সাম্প্রতিক সময় উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে রুমে বেঁধে পেটানোর হুমকি দেন চেয়ারম্যান।

শুধু তাই নয়, তার কথামত কাজ না করায় একজন নারী কর্মকর্তাকে বহিরাগতদের দিয়ে মানহানির ঘটনা ঘটানোর হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। সব দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা তুলে ধরা হয় অভিযোগে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধিসম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক দিয়ে খুলতে গেলে তার ছবি তোলেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একইসঙ্গে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করা হয় ‘(বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেবো। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?)’। এভাবে গালমন্দ করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।  

চরম উত্তেজিত হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোবাইলে কল করে তার দলের লোকদের ডাকলে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘটনার পর থেকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই ইউএনওসহ উপজেলার সব দফতরের কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।  

একই দিন রাতে ইউএনওসহ উপজেলার ১৮ জন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক বরাবরে এ সংক্রান্ত গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ  দায়ের করেন। যার স্মারক নং - ০৫.৪৭.৫২০২.০০০.০২.০৮৩.২০- ৭৬৪।  

এর অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগে উপজেলা পরিষদ আইনের লঙ্ঘন করায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।  

** উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনওর অভিযোগ

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।