বাগেরহাট: ১৩ বছর আগের (২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর) এই দিনে সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাগেরহাটসহ উপকূলীয় জেলা। সরকারি হিসেবে এসময় প্রায় ৯০৮ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
গণ মানুষের দাবি হিসেবে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার গত ২০১৫ সালে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) নামে একটি প্রকল্পের অধীনে মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। বেড়িবাঁধের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হলেও অরক্ষিত রয়ে গেছে সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা থেকে সাউথখালী পর্যন্ত সোয়া দুই কিলোমিটার বাঁধ। এ জায়গা থেকে প্রতিবছর কয়েকবার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার। অনেক সময় পানিবন্দি থাকতে হয় ০৭ থেকে ১০ দিন। মাত্র দুই কিলোমিটার এলাকায় নদীশাসন করে বেড়িবাঁধ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে সাময়িক সময়ের জন্য জোয়ারের পানির হাত থেকে এলাকাবাসীকে বাঁচাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। স্থানীয়রা বলছেন রিং বেড়িবাঁধ দিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা উপকার হলেও এটি স্থায়ী সমাধান নয়। নদীশাসন না করলে কোনো বাঁধই টেকসই হবে না।
উত্তর সাউথখালী এলাকার মিজানুর রহমান, মো. ইউনুস, সগির মোল্লাসহ কয়েকজন বলেন, সিডরে আপনজন হারিয়েছি, ঘর-বাড়ি, জমি-জমা হারিয়েছি। সিডরের পরে ছোট ছোট জলোচ্ছ্বাসে মূল্যবান সম্পদও হারিয়েছি। একটাই দাবি ছিল বলেশ্বর নদী সংলগ্ন এলাকা বাঁচাতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় সেই বাঁধ নির্মাণ হলেও আমাদের এলাকায় দুই কিলোমিটার জুড়ে এখনও বাঁধ নির্মাণ হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া রিং বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রত্যেক বছরই একাধিকবার প্লাবিত হই আমরা। আমাদের একটাই দাবি এই দুই কিলোমিটার এলাকায় নদীশাসন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, আমাদের এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য আমরা সরকারকে স্বাগত জানাই। মূল বাঁধের বেশিরভাগ অংশ নির্মাণ করা হয়ে গেছে। নদীশাসন না করায় ঝুলে আছে গাবতলা থেকে সাউথখালী পর্যন্ত সোয়া দুই কিলোমিটার বাঁধ। রিং বেড়িবাঁধে শুকনো মৌসুমে একটু ভাল থাকলেও বর্ষা মৌসুমে এটা কোনো উপকারে আসবে না আমাদের। সিডরের পরেও আমাদের এই ইউনিয়নের মানুষের কয়েকশ একর জমি বলেশ্বর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা আর কিছু চাই না স্থানীয় জনগণকে তাদের বাপের ভিটায় রাখতে এই সোয়া দুই কিলোমিটার অংশে নদীশাসন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার দাবি জানাই।
শরণখোলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, সিডর বিধ্বস্ত মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার ব্যাপক কাজ করেছে। এ জন্য আমি সরকারকে সাধুবাদ জানাই। এই অঞ্চলের মানুষের ভিটে-মাটি রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধও নির্মাণ হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেড়িবাঁধের সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু নদী শাসন না করার কারণে মাত্র সোয়া দুই কিলোমিটার জায়গায় এখনও টেকসই বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। এলাকার মানুষকে বাঁচাতে নদীশাসন করে ওই দুই কিলোমিটার জুড়ে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। নদীশাসনের কোনো বিকল্প নেই।
সিইআইপি প্রকল্পের পরামর্শক প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যতদ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে। করোনাকালীন আমাদের কাজ কিছুটা থেমে ছিল। এর মধ্যেও আমরা ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন করেছি। আর কিছু এলাকায় কাজ করার প্রয়োজন হবে না। সরকারের অন্য বিভাগের উন্নয়ন কাজের ফলে ওই এলাকা সুরক্ষিত থাকবে। এর বাইরে যে সোয়া দুই কিলোমিটার এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি সেখানেও আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সিডরের পর এই এলাকার মানুষের আর্থ সামাজিক ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আমরা বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। ঝুঁকিপূর্ণ দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে চলছে। যা খুব শিগগিরই শেষ হবে। নদী শাসনের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, আশাকরি অল্প সময়ের মধ্যে অনুমোদন পাওয়া যাবে। অনুমোদন পেলে নদীশাসনের কাজ শুরু করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০
আরএ