পাবনা: পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুরে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমিনপুর বাতেনীয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার নামে দানকৃত জায়গা দখলদারের হাত থেকে মুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে বেড়া উপজেলার আমিনপুর বাজারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে শিক্ষাক, শিক্ষার্থী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও এলাকাবাসী এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
একই এলাকার সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থাকা অবসরপ্রাপ্ত (সচিব) এস এম আমিনুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যরা এই ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গা জমি অবৈধভাবে দখল করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সমাবেশে বক্তব্য দেন- প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, প্রবীন সাংবাদিক আজাদ মির্জা, ইউপি সদস্য লোকমাস হোসেন, গ্রাম্য প্রধান জালাল উদ্দিন চৌধুরী, আপিল মাহামুদ, জুলহাস উদ্দিন, আ.লীগ নেতা এস এম সৈকত, কালাম মণ্ডল ও প্রধান শিক্ষক মোতাচ্ছের আলীসহ অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।
বক্তারা বলেন, ১৯২৪ সালে অত্র এলাকার দরিদ্র অসহায় পরিবারের ছেলে-মেয়েদের প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য অত্র এলাকার সমাজসেবক দানবীর লতিফুন্নেছা ও হাজী আব্দুল বারী নামে দুইজন তাদের সম্পদের সব কিছু মৃত্যুর পূর্বে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়াক্ফ করে দিয়ে যান। শতবর্ষের এই ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে এলাকায় বেশ সুনাম অর্জন করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা এই বিশাল পরিমাণ সম্পদ সেই সময়ের ওয়াক্ফ থাকা সভাপতি শর্তভঙ্গ করে ১৯৫৮ সালে আবু মো. আবদুল্লাহকে এই সম্পদের মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত করেন। সেই ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তার দুই ছেলে মো. আজিজুল করিম ও এস এম আমিনুল করিমসহ তার পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়ে তিন বছরের জন্য মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হন। অবৈধভাবে এই দায়িত্ব প্রাপ্তির পরে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সরকারি তহশীল অফিসের কাছে ভাড়া দেন তারা। শুধু তাই নয় এই প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ৮২ বিঘা জমির ১৩ বিঘা সম্পদ মোতাওয়াল্লী এস এম আমিনুল করিম নিলাম দেখিয়ে নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বক্তারা বলেন, এ বিষেয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতের আশ্রয় নেওয়া হলে আদালত পুনরায় মোতাওয়াল্লী নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত সব কিছুর উপরে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আদালতের আদেশ অমান্য করে অবৈধ মোতাওয়াল্লী ওই প্রতিষ্ঠানের সব জমিজমা লিজ দেন। প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা সম্পদ সাধারণ মানুষের কাছে বছর চুক্তিতে লিজ দিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
বক্তারা অরো বলেন, অবৈধ দখলদার এস এম আমিনুল করিমের বিরুদ্ধে কথা বল্লে তিনি প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের ভয়ভীতি দেখান। তাই প্রভাবশালীর হাত থেকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিপুল সংখ্যক জায়গা দখল মুক্তের জন্য প্রশাসনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাবাসী।
বর্তমানে প্রায় এক বিঘা জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে তিনশ ছেলে-মেয়ে প্রাথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করছে। সাত জন শিক্ষক ও দুইজন কর্মচারী দিয়ে দুটি শাখাতে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। ২২ জন এতিম ধর্মীয় শিক্ষার্থীর আবাসনসহ খাওয়া ব্যবস্থা করছে প্রতিষ্ঠানটি। মাসে লক্ষাধীক টাকা ব্যয় করে এই প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রেখেছেন স্থানীয়রা। প্রতিষ্ঠানটির আয়ের নিজস্ব উৎস থাকলেও অবৈধ দখলদারের কারণে নানা প্রতিকুলতা আর অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে চলতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২০
আরএ