ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কুষ্টিয়ায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, তদন্তের নির্দেশ আদালতের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২০
কুষ্টিয়ায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, তদন্তের নির্দেশ আদালতের

কুষ্টিয়া: গরু চুরি মামলার সন্দিগ্ধ আসামিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে সোপর্দ না করে থানা হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে মর্মে আদালতের কাছে অভিযোগ করেছেন আশরাফুল ইসলাম (৪২) নামে এক আসামি।

আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে গিয়ে নির্যাতন করে তাকে স্বীকরোক্তিতে বাধ্য করা হয়েছে আসামির এমন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পান আদালত।

এতে ইবি থানায় করা ওই গরু চুরি মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারকে তদন্তসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের বিচারক মো. মহসিন হাসান এ আদেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের শিকার আসামি আশরাফুল আদালতের কাছে দেওয়া আরজিতে লিখেছেন, গত ৮ নভেম্বর, ২০২০ গভীর রাতে সদর উপজেলার আব্দালপুর মাঠ পাড়ার বাসিন্দা মৃত নায়েব আলী মণ্ডলের ছেলে আশরাফুলকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে আসে ইবি থানা পুলিশ। সেখানে একটি কক্ষের মধ্যে ঢুকিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে চোখ বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। লাঠি ও হাতুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গিরায় গিরায় আঘাত করে। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ নীলাফোলা হয়ে গুরুতর জখম হয়। প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পুলিশের শেখানো কথা আদালতে স্বীকার করতে চাপ দেয়। এ অবস্থায় ৩৬ ঘণ্টা পর গরু চুরির মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আসামিকে আদালতে সোপর্দ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এ সময় আসামির দেওয়া জবানবন্দির সঙ্গে শারীরিক অবস্থার বিষয়টি আদালতের নজরে এলে তাৎক্ষণিক আসামির শারীরিক ও ডাক্তারি পরীক্ষা করতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া ডাক্তারি সনদে আসামিকে শারীরিক নির্যাতনের সত্যতা নিশ্চিত হন আদালত।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) আদালত থেকে উত্তোলিত মামলার নথিপত্রের সার্টিফাইড কপিতে আদেশনামায় যা লেখা আছে- ‘এই মামলার সন্দিগ্ধ আসামি তথা ভিকটিমের বিবৃতি, তাকে পুলিশ কর্তৃক থানা হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা আছে বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়’। ‘সুতরাং উপরিউক্ত বিষয়টির আলোকে পুলিশ সুপার কুষ্টিয়াকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। আদেশের কপিসহ সন্দিগ্ধ আসামি তথা ভিকটিম মো. আশরাফুল ইসলামের দেওয়া বিবৃতি ও চিকিৎসক প্রদত্ত জখমী সনদ পুলিশ সুপার কুষ্টিয়া বরাবর পাঠানো হোক।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, ‘বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার ইবি থানাধীন পশ্চিম আব্দালপুর মাঠপাড়া গ্রামের মৃত নায়েব আলী মণ্ডলের ছেলে আশরাফুলকে (৪২) সদর কোর্টের জিআরও এএসআই স্বপন হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারপিটের নীলাফোলা জখম এবং হাঁটু ও গোড়ালির সংযোগস্থলে ইনজুরি আছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে জেলা হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইবি থানার উপ-পুলিশ কর্মকতা আব্দুর রহমান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার হেফাজতে কোনো আসামিকে নির্যাতন করা হয়নি। আসামি আশরাফুলের ডাক্তারি পরীক্ষায় যদি নির্যাতনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আমি অভিযোগ মাথা পেতে নেবো।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত জানান, এ সংক্রান্ত আদালতের কোন নির্দেশনা আমার কাছে আসেনি। নির্দেশনা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।