ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এএসপি আনিসুলকে মাইন্ড এইডে পাঠান মানসিক স্বাস্থ্যের রেজিস্ট্রার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২০
এএসপি আনিসুলকে মাইন্ড এইডে পাঠান মানসিক স্বাস্থ্যের রেজিস্ট্রার

ঢাকা: পুলিশের ৩১তম বিসিএস কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম চিকিৎসার জন্য যান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। কিন্তু সেখানকার রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্ররোচনা ও সরাসরি হস্তক্ষেপে আদাবরের নামমাত্র ক্লিনিক মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়া হয় এএসপি আনিসুলকে।

সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসার নামে নির্মম মারধরের শিকার হয়ে প্রাণ হারান এএসপি আনিসুল। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এলাকায় নিজ বাসা থেকে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ।

হারুন অর রশীদ বলেন, এএসপি আনিসুল করিম হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত ১৫ জন আসামির মধ্যে ১২জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি ৩ জনের মধ্যে ১ জন বিদেশে ও ২ জন পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতারদের মধ্যে ৪ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেফতারদের জবানবন্দি ও জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় কারা জড়িত, কাদের ইন্ধনে সরকারি মানসিক হাসপাতাল থেকে মাইন্ড এইডে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, কাদের যোগসাজস রয়েছে, কে উদ্বুদ্ধ করেছে আমরা সবার নাম পেয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করেছি।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন প্রথমে এএসপি আনিসুল করিমকে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর ঠিকঠাক সেবা দেওয়া হয়নি। অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে তাকে একটা বেডে শুইয়ে দুইটা ইনজেকশান পুস করা হয়। এর মধ্যেই এএসপি আনিসুল ঘুমিয়ে পড়েন।

পরে হাসপাতালের রেজিস্ট্রার মামুন এসে দৌড়াদৌড়ি করে, ফোনে যোগাযোগ করে এএসপি আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে পাঠান। আজ গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এর দায় এড়াতে পারেননি।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, মামুন সরকারি প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার হওয়া স্বত্ত্বেও তিনটা হাসপাতালে রোগী দেখেন। এখানে তার ২৪ ঘণ্টার ডিউটি থাকা স্বত্ত্বেও এসব ফাঁকি দিয়ে টাঙ্গাইলের ঢাকা ক্লিনিক, ঢাকার মাইন্ড ওয়েল এবং মাইন্ড এইড হাসপাতালে রোগী দেখেন।

মাইন্ড এইডের মতো যে হাসপাতালের কোনো অনুমোদন নেই সেই হাসপাতালে রোগী দেখেন কেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেছেন, সবাই দেখে তাই আমিও দেখি।

সরকারি হাসপাতাল থেকে কেন ওই নামমাত্র হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগীর বেটার ট্রিটমেন্ট চেয়েছিলেন। তাহলে কি সরকারি হাসপাতালে বেটার ট্রিটমেন্ট হয় না? এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, রেজিস্ট্রার মামুনসহ দালালচক্র সব রোগীকে বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠাতেন না। যেসব রোগী আসতেন তাদের অবস্থা থেকে শুধু মাইন্ড এইড না বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাতেন।

এএসপি আনিসুলের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর খবর পেয়ে মাইন্ড এইডে যান রেজিস্ট্রার মামুন। সেখানে গিয়ে তিনি নিজেই অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃত মানুষকে এনে আবার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করান। এটা হত্যাকাণ্ড অবশ্যই, মামুন যা করেছেন এটা একধরনের প্রতারণাও।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি হারুন বলেন, কোন রোগীকে এসব ক্লিনিকে পাঠালে তিনি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন পেতেন। একজন রোগীকে সরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পরেও কেন ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি, এগুলো আমরা ধরছি। গত কয়েকদিনে আমরা হাসপাতালের এমন ২০ থেকে ২৫ জন দালালকে গ্রেফতার করেছি। এগুলো বন্ধ করা হবে।

সোমবার (৯ নভেম্বর) আদাবরের ওই হাসপাতালে যাওয়ার পর একটি রুমে বসে নাস্তা খান এএসপি আনিসুল করিম। কিছুক্ষণ পর তিনি ওয়াশরুমে যেতে চাইলে বেলা আনুমানিক পৌনে ১২ টার দিকে হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় তাকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যান। এ সময় এএসপি আনিসুল করিমের সঙ্গে তার বোন উম্মে সালমা উপরে যেতে চাইলে আরিফ ও রেদোয়ান সাব্বির তাকে বাধা দিয়ে দ্বিতীয় তলার কলাপসিবল গেট আটকে দেন।

বেলা ১২ টার দিকে আরিফ নিচে এসে তার বোনকে উপরে যাওয়ার জন্য ডাক দেন। এরপর তার বোনসহ পরিবারের সদস্যরা উপরে গিয়ে একটি কক্ষের মেঝেতে আনিসুল করিমকে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর পরিবারের সদস্যরা একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে আনিসুল করিমকে উদ্ধার করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ১২ টা ৫৮ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরবর্তীতে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পৌনে ১২ টার দিকে হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফ আনিসুল করিমকে মারতে মারতে দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে যান। তাকে কক্ষের মেঝেতে জোরপূর্বক উপুড় করে ফেলে ৩/৪ জন হাটু দিয়ে পিঠের উপর চেপে বসেন। কয়েকজন পিঠমোড়া করে একটি ওড়না দিয়ে তার দুই হাত বেঁধে ফেলেন। কয়েকজন কনুই দিয়ে এএসপি আনিসুল করিমের ঘাড়ে ও মাথায় আঘাত করতে থাকেন। একজন তার মাথার উপরে চেপে বসেন এবং সবাই মিলে তাকে উপর্যুপরি কিল-ঘুসি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ১২ টার দিকে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২০
পিএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।