ঢাকা: ২০১৯ সালের ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলের ১০ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। অনেক প্রাণহানি ছাড়াও সড়কসহ উপকূলীয় বিভিন্ন অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ জন্য ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তাবে দ্রুত প্রণয়ন করে প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে পরিকল্পনা সচিব আসাদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এই প্রকল্পসহ একনেক সভায় মোট ৫ প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৫০৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭ হাজার ৪২৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় করবে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ২৬ জেলার ১ হাজার ১০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ঘর-বাড়ি, সড়ক ও কালভার্টের। ৩টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেই প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।
সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত এসব জেলার ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। চলতি সময় থেকে ২০২৩ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এলজিইডি।
আম্পানের প্রভাবে ২০০টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বন্যায় ৩৩টি জেলার ১৫৪ উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্টের অবস্থা বেহাল। এজন্য প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে ৩৫৪, ইউনিয়ন পর্যায়ে সড়ক পুনর্বাসন করা হবে ২৬৭ কিলোমিটার।
এছাড়াও গ্রামপর্যায়ে ১৮৯ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হবে। প্রকল্পের আওতায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ে ১ হাজার ২১২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হবে। আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু পুনর্নির্মাণ করা হবে ২৪৬ মিটার। কালভার্ট পুনর্নির্মাণ করা হবে ১২৮ মিটার।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা সড়ক সংস্কার করা হবে ১ হাজার ২২৭ কিলোমিটার, ইউনিয়ন পর্যায়ে ১ হাজার ১০৬ কিলোমিটার। আর গ্রাম সড়ক উন্নয়ন করা হবে ৬৯৬ কিলোমিটার।
আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের ১৪টি জেলার ৬৯টি উপজেলায় এ সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। অন্যদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৭টি বিভাগের ২৮টি জেলার ১৮২টি উপজেলা এবং অতিবর্ষণে রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২২টি জেলার ১৩৯টি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ৩টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি পোষাতে দেশের প্রায় সব জেলাতেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
এছাড়া ৭৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর ডান তীরের ভাঙন থেকে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলাধীন কাতলামারী ও সাঘাটা উপজেলা গোবিন্দ এবং হলদিয়া এলাকা রক্ষা প্রকল্প ও গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকা। খুলনা সিটি করপোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় হবে ৩৯৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বুলবুল, আম্পান ও বন্যার ক্ষতি পোষাতে ৬ হাজার কোটি টাকা
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২০
এমআইএস/এমজেএফ