ঢাকা: বকেয়া বেতন চাওয়ায় পেটে লাথি খেয়ে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাদিজা ইসলাম নামের ওই নারী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দৈনিকভিত্তিক কর্মচারী।
তবে অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, সেই কর্মকর্তা বলছেন, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।
খাদিজার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়েছে কি না সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) দৈনিক ভিত্তিক ২২৪ জন কর্মচারী বেতনভাতা এবং চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। গত ১৫ নভেম্বর রোববার তারা আগারগাঁও ইফা কার্যালয়ে ধর্ম সচিব নূরুল ইসলামের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে যান। খাদিজাও তাদের মধ্যে ছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, লিখিত অভিযোগ জানানোর কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সচিবের সামনেই খাদিজার পেটে লাথি মারেন ইফার সহকারী পরিচালক (প্রশাসন বিভাগ) মো. মশিউর রহমান ভূঁইয়া। দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা খাদিজা সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। রক্তপাত হতে থাকে। দ্রুত তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে। তিনি এখনও শঙ্কামুক্ত নন।
স্বজনদের দাবি, খাদিজা ইসলাম দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আঘাত পাওয়া গর্ভ নষ্ট হয়ে গেছে।
এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে সোমবার (১৬ নভেম্বর) কর্মসূচি পালন করেছেন দৈনিকভিত্তিক কর্মচারীরা।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে খাদিজার দেবর ও ইফায় কার পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, “ভাবি গত ১২ মাস ধরে বেতন পান না। সচিব স্যারের সামনে বেতনের দাবি করতে যাওয়ায় ভাবির তলপেটে লাথি মারেন কর্মকর্তা। ভাবির পেটে দুই মাসের বাচ্চা ছিল নষ্ট হয়ে গেছে। ভাবি এখনও শঙ্কামুক্ত না। আমরা কোথাও বিচার পাচ্ছি না। ভাবির রিপোর্ট ফাইলও আটকে রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ”
তবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন।
মো. মশিউর রহমান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, “আমি মহিলার শরীরে কোনো স্পর্শই করি নাই। আপনারা ডিজি (মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ) স্যারের রুমে আসেন, ভিডিও ফুটেজ দেখেন। আমি ঘটনাস্থলেই ছিলাম না। ”
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, খাদিজা ইসলাম হাসপাতালে গাইনি বিভাগে চিকিৎসাধীন। তবে গর্ভ নষ্ট হওয়ার বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. কে এম মামুন মোর্শেদ বাংলানিউজকে বলেন, “শুধু এইটুকু বলতে পারি, রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর বেশি কিছু আমরা বলতে পারবো না। ”
পেটের বাচ্চা নষ্ট হয়েছি কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে উপ-পরিচালক বলেন, “কারো ব্যক্তিগত রোগ সম্পর্ক কেউ কিছু বলতে পারে না। এটা মেয়েলি বিষয়। সুতরাং কিছু বলা যাবে না। আপনি তথ্য পেতে চাইলে প্রোপার চ্যানেলে আসতে হবে। ”
ইফা কর্মচারী কল্যাণ সমিতির দাবি, করোনাকালের কঠিন সময়ে দৈনিকভিত্তিক কর্মচারীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এদিকে বেতন ও চাকরির বিষয়ে বার বার ইফা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ইফার অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) খাদিজা আক্তার শিলা হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে আছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা ১২ মাস বেতন পাচ্ছি না। আমরা আর কতদিন সহ্য করবো। বেতনের দাবি তুলেছি অথচ পেটে লাথি মেরে আমার সহকর্মীর বাচ্চা নষ্ট করা হলো। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়োগ চাই। ইফায় ৪৮৮টি শূন্যপদ আছে। এসব পদে আমাদের নিয়োগ দেওয়া হোক। ”
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২০
এমআইএস/এজে