সিলেট: রাতের মধ্যেই সিলেট নগরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে চলছে নগরের উপকণ্ঠ কুমারগাঁও পাওয়ার গ্রিড ১৩২/৩৩ কেভি উপ-কেন্দ্রে ২৫ দশমিক ৪১ এমবিএ ট্রান্সফরমারের মেরামত কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সারা সিলেট অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছে। দুর্ভোগ কাটাতে ঢাকা থেকে উচ্চ পর্যায়ের প্রকৌশলী দল সিলেটে এসে মেরামত কাজ শুরু করেছেন। পাঁচ জনের ওই দলে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের দু’জন, প্রটেকশন বিভাগের এসি, নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী রয়েছেন।
জানা গেছে, কারিগরি দলের সদস্যরা কম ক্ষতিগ্রস্ত ট্রান্সফরমার নিয়ে কাজ করছেন। কাজ সম্পন্নতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। এরপর রাতের মধ্যেই সিলেট মহানগরীর কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হবে। এছাড়া অন্য এলাকাগুলোতেও পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। তবে একটি ট্রান্সফরমার থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে ওই ট্রান্সফরমারের এলাকা ছাড়াও অন্য এলাকাগুলোতে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি কুমারগাঁও উপ-কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. মোস্তকিম বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, রাতের মধ্যেই সিলেট নগরের আংশিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। সে লক্ষ্যে একটি ট্রান্সফরমার মেরামত কাজ চলছে। এরইমধ্যে ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপ-কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের দু’টি মেঘা ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্তের কারণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগ সিলেটের অধীনে চারটি ডিভিশন ছাড়াও জগন্নাথপুর এলাকা বিদ্যুৎহীন রয়েছে। ডিভিশন-১ এর অধীনে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এলাকা, আম্বরখানা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজারসহ সুরমা নদীর উত্তরপার। ডিভিশন-২ এর অধীনে কুমারপাড়া, নাইওরপুরল, উপশহর, মিরাবাজার, সুবানীঘাট, বালুচর, মেন্দিবাগ, তের রতন এলাকা। ডিভিশন-৩ এর অধীনে সিটি করপোরেশন এলাকার ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড ও দক্ষিণ সুরমার কিছু এলাকা। ডিভিশন-৪ এর অধীনে ডিভিশন কুমারগাঁও, টুকেরবাজার, বাধাঘাট, মদিনা মার্কেটসহ সদর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। এছাড়া সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর আবাসিক এরিয়া বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, কারিগরি দলের পাঁচজন সদস্যের নেতৃত্বে পুরো টিম আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে রাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়। কম ক্ষতিগ্রস্ত ট্রান্সফরমারটি চালু করা গেলে সবার আগে বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-২ এর অধীনস্থ এলাকা।
তিনি বলেন, সবচেয়ে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়ার জন্য ফিডার এলাকার প্রটেকশন এরিয়াগুলোতে কাজ চলছে। কেননা, যদি পুরো প্রটেকশন এরিয়া ঠিক না করে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করি, তাহলে সমস্যা থেকেই যাবে। মূলত, যেটা চালু করছি, সেটা শতভাগ ঠিক আছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণে নেওয়া। এরপর ডেমেজটা চালু করতে পারলে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে পারবো বলে আশা রাখি।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যুতের গ্রিডে ট্রান্সফর্মারে আগুন লাগে। এতে করে সাব স্টেশনের আশপাশের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর সাতটি ইউনিট ও বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গ্রিড উপ-কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগুনে ৭০ কোটি টাকা মূল্যের ২৫/৪১ এমবিএ দু’টি ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেছে। সেই সঙ্গে ৩৩ কেভি ফিডার ও বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে পুরো সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বুধবার দিনগত রাত ১টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিলেট নগরী, আশপাশের বিভিন্ন এলাকা, ছাতক ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ফলে প্রায় সাড়ে চার লক্ষাধিক গ্রাহক দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। পরে ছাতক ও সুনামগঞ্জ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিপর্যয়ে বিপাকে পড়েছেন মহানগর এলাকার লোকজন। বিশেষ করে বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে করে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও হাসপাতালে রোগীরাও পড়েছেন বিপাকে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ না থাকায় অফিস আদালতের কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে পড়ে।
** সিলেটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আগুন নিয়ন্ত্রণে
** সিলেটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২০
এনইউ/এসআরএস